রাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ছাত্রদলের আহ্বান

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ছিল দেশের শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এক ঐতিহাসিক লড়াই—যা প্রমাণ করে, অন্যায় ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ কখনো নতিস্বীকার করে না। সেই চেতনা ও প্রেরণাকে শক্তি হিসেবে ধারণ করেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ফ্যাসিবাদী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পিছনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা এসব অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, বিগত জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ধ্বংস করতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের একটি গোষ্ঠী তৎকালীন প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড়ায়। এর ফলে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, সেই হামলাকে বৈধতা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক প্যারিস রোডে মানববন্ধনের নামে ‘নাটক’ মঞ্চায়ন করেছিলেন, যা ‘ঘৃণিত ও লজ্জাজনক’। এই গোষ্ঠী এখনো শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন ও দমননীতির মাধ্যমে একাডেমিক পরিবেশকে কলুষিত করছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের উপাচার্য, প্রো-ভিসি ও প্রক্টরের নির্দেশ ও উপস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এবং নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন, বলেন ছাত্রদল নেতারা।
তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বর্তমান প্রশাসনও বিগত প্রশাসনের মতোই কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। শিক্ষক নিয়োগে তারা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মনোনীত প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে বিতর্কিত পন্থা অবলম্বন করছে, যা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী।
তারা আরও দাবি করেন, ছাত্রদল রাবি শাখার সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ যে বিদ্বেষপূর্ণ ও মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন এবং লজ্জাজনক।
ছাত্রদল নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সকল গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞানচর্চার স্থান নয়, এটি মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধের দুর্গ। সুতরাং এই দুর্গ রক্ষা করতে হলে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের সকল অপতৎপরতা দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে হবে।
এই প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাদের পরবর্তী কর্মসূচিও ঘোষণা করে। আগামী ০৭ আগস্ট, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা করা চিহ্নিত শিক্ষকদের ছবিসহ নামের তালিকা প্রকাশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মিঠু,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহের রহমান এবং দপ্তর সম্পাদক নাফিউল জীবনসহ অন্যান্য কর্মীবৃন্দরা।