ইশরাককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেয়র না করলে কঠিন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো না হলে আবার কঠিন আন্দোলন শুরুর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের ভেতরের ফটকে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণাটি দেন এই কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান। ঘোষণার পর আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করা হয়।
মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, যার ২৪ ঘণ্টা শেষ হয়েছে। কিন্তু দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে মেয়রের শপথ পড়ানো না হয়, তাহলে আবার কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনে নামবো। আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসী তাঁকে মেয়রের পদে বসাবে।’
মশিউর রহমান আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে সরাসরি নাগরিক সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত পরিচ্ছন্ন বিভাগের কাজ চলবে। এই বিভাগের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাঁদের মালামাল নিতে পারবেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশনের জরুরি সেবার কাজটি চলমান থাকবে।
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে আজ বেলা ১১টা থেকে নগর ভবনের ভেতরের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়নের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা। এতে নগর ভবনে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের নাগরিক সেবা। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
১৪ মে থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। টানা ১৩ দিন ধরে আন্দোলন চলে। মাঝে দাবি পূরণের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এরপর আবার আন্দোলন শুরু হয়।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবনের ফটকগুলোয় তালা ঝুলছে। ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ও ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে ইশরাকের সমর্থকেরা নগর ভবনের ভেতরের ফটকে অবস্থান নিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপর নগর ভবন প্রাঙ্গণে মিছিল করছেন। মিছিল শেষ হলে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আবার স্লোগান দিচ্ছেন।
এ সময় ‘দাবি মোদের একটাই, মেয়র ছাড়া অফিস নাই’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘রাজপথের ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দুই দফায় কোর্ট রায় দেওয়া সত্ত্বেও ইশরাক হোসেনকে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তিনি শপথ নিতে পারছেন না। জনগণের ভোগান্তির জন্য মূলত উপদেষ্টা দায়ী।’
নাগরিক সেবা বন্ধ
আজ দুপুরে দেখা যায়, নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে। ফটকে তালা থাকায় নগর ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। বন্ধ রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ সব নাগরিক সেবা। ফলে সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন মানুষ।
এক বছর আগে সিটি করপোরেশনের মুদ্রণের কাজ করেছেন ক্রিয়েটিভ কালার প্রিন্টার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম। কিন্তু এখনো বিল পাননি। এক বছর ধরে সিটি করপোরেশনে আসা–যাওয়া করছেন তিনি। দুই মাস পরে আজ দুপুরে নগর ভবনে এসে দেখেন সব ফটকে তালা লাগানো। ফিরে যাওয়ার সময় কথা হয়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিলের জন্য এক বছর ধরে ঘুরছি। গত দুই মাস আসিনি। আজ এসে দেখি সব বন্ধ। কবে টাকা পাব বুঝতে পারছি না। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।’
কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে করপোরেশনের কর্মকর্তারাও অঘোষিত ছুটিতে আছেন। ফটকগুলো তালাবদ্ধ থাকার কারণে কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না। দাপ্তরিক কাজ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
