সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব এনসিপির

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংবিধান সংস্কার ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। দলটির দাবি, এই কাউন্সিল নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।
মঙ্গলবার (৬ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
এনসিপির প্রস্তাবনায় যা রয়েছে
সারজিস আলম বলেন, সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত, ভোটার বয়স ১৬ বছর ও প্রার্থীর বয়স ২৩ বছর নির্ধারণ, তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, ১০০ আসনে সরাসরি নারী প্রতিনিধিত্ব, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল ও সংবিধানের ৩৩(৩) ধারা সংস্কারের প্রস্তাব এনেছে দলটি।
তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যেন সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের সুযোগ থাকতে হবে। বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন, নিজস্ব প্রশাসনিক সচিবালয় এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি।”
দুদক ও প্রশাসনে সংস্কারের দাবি
দুদককে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, “সরকারি ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকা দুর্নীতির বড় বাধা। দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা বাতিল করা উচিত।” নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে স্বাধীন ‘নাগরিক সেবা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবও দেন তিনি।
স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিলের প্রস্তাব
সারজিস আলম বলেন, “দলীয় প্রতীক প্রথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বাছাইকে প্রভাবিত করছে। এর ফলে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণযোগ্য মানুষরা রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন। তাই এ পদ্ধতি বাতিল করা দরকার।”
আন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে এনসিপির অবস্থান
সংলাপে উপস্থিত এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “নির্বাচনের আগে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। এর মাধ্যমে যেন সরকার শুধু নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত থাকে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার মানসিকতা না থাকে।”
তিনি জানান, গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া ও মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের পরেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে মত এনসিপির।
আখতার হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অতীতের নির্বাচনগুলো অগ্রহণযোগ্য। আস্থাহীনতার এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরবে এনসিপি।”
