দামেস্কে ইসরাইলের তীব্র হামলা, দ্রুজ ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা শহরে ধারাবাহিক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হামলার লক্ষ্য ছিল সামরিক স্থাপনা ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ইসরাইল দাবি করছে, তারা সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষায় এবং তাদের ওপর হামলার জন্য দায়ী সরকারপন্থি বাহিনীকে প্রতিহত করতেই এই অভিযান চালিয়েছে।
সিরিয়া এই হামলার নিন্দা জানিয়ে এটিকে দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি পরিকল্পিত কৌশল হিসেবে দেখছে। দামেস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলাগুলোকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
গত বুধবার বিকালে দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর, সামরিক ঘাঁটি এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে একাধিক বিমান হামলা হয়। আঘাতে ভবনগুলোর কাঠামোগত ক্ষতি হয় এবং পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। আরও একটি হামলা চালানো হয় উমাইয়াদ স্কয়ারের কাছে, যেটি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের অদূরবর্তী এলাকা।
একই দিনে দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা শহরেও ইসরাইলি ড্রোন হামলা চালায়। এটি দ্রুজ অধ্যুষিত একটি শহর, যেখানে সম্প্রতি সরকারপন্থি বাহিনী, স্থানীয় দ্রুজ মিলিশিয়া ও বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে টানা চারদিন ধরে সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সুয়েইদায় সহিংসতার সূচনা হয় দ্রুজ ও বেদুইন সম্প্রদায়ের মধ্যে অপহরণ ও পাল্টা আক্রমণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং এর ফলে সরাসরি দ্রুজদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় বেসামরিক জনগণের ওপর হামলার ঘটনাও সামনে এসেছে।
ইসরাইলের দাবি, দ্রুজ সম্প্রদায় তাদের মিত্র এবং তারা ওই সম্প্রদায়ের রক্ষায় বাধ্য হয়েছে। তবে সিরিয়া এই ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং হামলাগুলোকে প্রকাশ্য আগ্রাসন বলে উল্লেখ করেছে।
সিরিয়া ও ইসরাইল উভয় দেশই দ্রুজদের রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবে দেখে। বিশ্বের প্রায় দশ লাখ দ্রুজ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অর্ধেকই সিরিয়ায় বসবাস করে। সুয়েইদায় তাদের ঘাঁটি হলেও সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অবস্থান অভিন্ন নয়।
একটি অংশ সিরীয় সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পথে গেলেও আরেকটি অংশ স্পষ্টভাবে বিরোধিতা করছে। কেউ কেউ ইসরাইলের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করছে। এমনকি কেউ কেউ সরকার ও ইসরাইল — উভয়ের সঙ্গেই সমঝোতায় অনাগ্রহ প্রকাশ করছে।
সিরিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই দ্রুজরা দক্ষিণে নিজস্ব মিলিশিয়া গঠন করে। বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী প্রশাসনের উপস্থিতি তারা মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে। কেউ এই সরকারের ওপর আস্থা রাখছে না, আবার কেউ কৌশলগতভাবে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে। স্থানীয়ভাবে তারা সিরীয় সেনাবাহিনীর পরিবর্তে নিজেদের মিলিশিয়ার ওপর বেশি নির্ভরশীল।
সিরিয়া বলছে, এই হামলা একটি পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ও কর্তৃত্বকে খর্ব করতে পরিচালিত হয়েছে। দামেস্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, ইসরাইল চায় না সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব পুরো ভূখণ্ডে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করুক। বরং তারা চায় একটি দুর্বল, বিভক্ত ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য সিরিয়া গড়ে উঠুক।
সিরিয়া সরকার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে সুয়েইদা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। তবে অন্যান্য সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী বা মিলিশিয়া ইউনিট নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
