চোখ হারানো কিশোর লামিমের স্বপ্ন— “একটা সৎ দেশ চাই”

“আমি চাই দেশটা সুন্দর হোক, কোনো চুরি-বাটপারি যেন না থাকে”— এ কথা এক কিশোরের, যে রাষ্ট্রীয় সহিংসতায় হারিয়েছে তার একটি চোখ।
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সারা দেশে সভা-সমাবেশের অংশ হিসেবে শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সমাবেশ করে। সেখানে অংশ নেন দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। সমাবেশে তার দেখা হয় ১৫ বছর বয়সী লামিমের সঙ্গে— যিনি গত বছর আন্দোলনে অংশ নিয়ে হারিয়েছেন তার বাম চোখ।
শুক্রবার রাতেই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে এক আবেগঘন পোস্টে ডা. জারা লেখেন, “লামিমের বয়স মাত্র ১৫। একটু আগে ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে দেখা হলো। সেখান থেকেই কাছাকাছি এলাকায় সে আন্দোলন করেছিল।”
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট, পরিবারের নিষেধ সত্ত্বেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল লামিম। ফুটবল খেলার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে সারা দিন ছিল রাস্তায়। বিকেলে তার চোখে গুলি লাগে। এরপর থেকে সে বাম চোখে আর দেখতে পায় না।
জারার পোস্ট অনুযায়ী, “আমি জানতে চাইলাম, কেন গিয়েছিলে আন্দোলনে? লামিম বলল— ভাইদের টিভিতে দেখছিলাম, পুলিশ আর আওয়ামী লীগের লোকেরা মিলে মারছে। মনে হলো, পাশে দাঁড়াতে হবে।”
নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল লামিমের, কিন্তু চোখ হারানোর পর পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে না ঠিকমতো। তবে দেশ নিয়ে তার চাওয়া একেবারে সরল ও নির্ভরযোগ্য— “একটা সৎ দেশ চাই”।
ডা. তাসনিম জারা লিখেছেন, “এই সহজ কথাটাই সংস্কারের মূল আকাঙ্ক্ষা। এমন দেশ, যেখানে নিজের প্রাপ্য পেতে কাউকে ঘুষ দিতে না হয়। যেখানে একটি কিশোর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে চোখ হারাবে না। যেখানে তারা নির্ভয়ে নিজের স্বপ্ন দেখতে পারবে।”
তিনি আরও বলেন, “অনেকেই বুঝতে পারছেন না— নতুন প্রজন্মের মধ্যে কী রকম রূপান্তর ঘটেছে। তারা জানে কী ভাঙা, কী পচা। আর তা বলতে তাদের কোনো দ্বিধা নেই। এই প্রজন্মের মধ্যে এক নির্মল স্পষ্টতা আছে, যেটা কপটতা বা ভয় দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না।”