‘ভুলের পুনরাবৃত্তি চললে দেশ আবার ওয়ান ইলেভেনের পথে’: মঞ্জু

রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদ ও দায়িত্বহীনতার কারণেই দেশ আবারও ২০০৭ সালের মতো একটি অনিবার্য ‘ওয়ান ইলেভেন’ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা শুধু পদধ্বনি নয়, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি—২০০৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারির মতো আমরা একই পথে হাঁটছি।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি রাজনৈতিক সমঝোতা না হয়, যদি বিভেদের রাজনীতি অব্যাহত থাকে, তাহলে অনিবার্য পরিণতির দায় সবাইকেই নিতে হবে।”
মঞ্জু বলেন, “সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনই এখন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রয়োজনীয় সমাধান। এই পদ্ধতি গ্রহণ না করলে অন্তত যারা জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের পথ বের করতে হবে।”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনার পতন। কিন্তু এখন সেই ঐক্য ভেঙে ভেতরেই বিভেদ, গোপন তথ্য ফাঁস, সন্দেহ, আর কৃতিত্ব বিতর্ক শুরু হয়েছে। এটা জাতির জন্য অশনি সংকেত।”
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু বলেন, “২৪-এর অভ্যুত্থানে যে আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা আমরা দেখেছি, তা ইতিহাসে বিরল। মায়েরা, প্রবাসীরা, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারাও রাজপথে নেমে এসেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দল হিসেবে প্রকাশ্যেই রাজপথে ছিলাম। ছাত্রদের গ্রেফতারের পর আইন সহায়তা, আহতদের চিকিৎসা, আলেম-ওলামাদের সম্পৃক্ত করা—প্রত্যেকটি স্তরে সক্রিয় ছিল এবি পার্টি।”
সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে মঞ্জু বলেন, “একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা আমাকে বলছেন, ‘পিআর বুঝি না’। আমি বলেছি, আসুন আমার কাছে ক্লাস করেন। বিনামূল্যে বুঝিয়ে দেব। আরেকজন বলেছেন, যারা পিআর বোঝেন না, তাদের রাজনীতি করা উচিত না।”
তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা যদি সংস্কার মেনে থাকেন, তাহলে আইনি ভিত্তি দিতে সমস্যা কোথায়? পিআর না বোঝেন আসুন বিতর্ক করি—বায়তুল মোকাররম বা প্রেস ক্লাবের সামনেই হোক। আর না এলে বুঝব মুখের কথা আর মনের কথার মিল নেই।”
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “এই দেশে এখনো হাসিনার প্রেতাত্মা ও ভারতের প্রভাব রয়েছে। ফ্যাসিবাদ কেবল রূপ বদলেছে, দূর হয়নি। এখন দরকার সমঝোতার ভিত্তিতে অন্তত ৫ বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠন। বিভেদে যদি জাতি বিভক্ত হয়, তাহলে এর ভার নিতে হবে সবাইকে।”
তিনি বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র যেন অলংকার না হয়ে বাস্তবায়নযোগ্য হয়, যেন তা বাস্তব পরিবর্তনের দলিলে পরিণত হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “জুলাইয়ের শহীদদের বেওয়ারিশ হিসেবে দেখতে চাই না। দ্রুত লাশ শনাক্ত করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রে যদি সব রাজনৈতিক দলের পরামর্শ থাকত, তাহলে তা আরও গ্রহণযোগ্য হতো।”