বারবার আন্দোলন, তবু অসংগতি—‘এটা কেন হবে’: নজরুল ইসলাম খান

বাংলাদেশের মানুষ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা সাম্প্রতিক বছরগুলোর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। এরপরও দেশে অসংগতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করতে হয়—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
শনিবার (৫ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ কতটুকু সুরক্ষা দেয়?’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
তিনি বলেন, বারবার আন্দোলন, সংগ্রাম করে এ দেশের মানুষ ন্যায্য অধিকার আদায়ে জীবন দিয়েছে। অথচ আজও জনগণ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, নিয়মতান্ত্রিক উন্নয়নের বদলে এক ধরনের ‘সাপ-লুডু’ জাতীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়েছে জাতি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের অগ্রগতির ধারা যেন কখনোই স্থায়ী হয় না। মানুষ একটু এগোতে না এগোতেই কোনো এক ‘সাপের কামড়ে’ বারবার পিছিয়ে পড়ে জাতি। এই অবস্থাকে তিনি দুঃখজনক, অগ্রহণযোগ্য ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন।
শ্রমিকদের দুরবস্থার প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, বাংলাদেশে শ্রম আইনে বলা আছে প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র দিতে হবে। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশের মাত্র ২০–২৫ শতাংশ শ্রমিক এই মৌলিক অধিকারটি পায়। নিয়োগপত্র নেই, গ্রাচুইটি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাস্তবে মেলে না। যারা শ্রমিকদের কম মজুরি দেয় বা অধিকার বঞ্চিত করে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কাঠামো নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়-দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার ঘাটতির দিকটিও তুলে ধরেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, একজন সাধারণ নাগরিকের অপরাধ বা ভুলের জন্য তাৎক্ষণিক শাস্তির বিধান থাকলেও ক্ষমতাধর বা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সেই নিয়ম প্রয়োগ হয় না। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে যারা বিশাল ক্ষমতার অধিকারী, তারা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে কিংবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আইন লঙ্ঘন করলে তাদের জন্য শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ, নারী, শিশু, শ্রমিক, যুবক—সবাইকে কেন্দ্র করেই আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু তারা সেই আইনের সুফল কতটা পায়, সে প্রশ্ন আজও জাগে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব আইনকে সহজ করে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা, তাদের জানানো কীভাবে এই আইন তাদের কল্যাণে কাজে লাগতে পারে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র আইনের ভাষা সুন্দর করলেই হবে না, বাস্তব প্রয়োগ না থাকলে কিংবা আইন প্রয়োগকারীরাই যদি অপব্যবহার করেন তবে আইনের সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে না। তাই নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংস্কার প্রয়োজন বলেও মত দেন তিনি।