জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছাত্রশিবিরের ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

‘সততা ও দক্ষতায় প্রজন্ম গড়ার প্রতিজ্ঞায় জুলাই জাগরণ, নব উদ্যমে বিনির্মাণ’—এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:
সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান
শহীদদের কবর জিয়ারত ও পরিবার পরিদর্শন
‘জুলাই দ্রোহ’ শীর্ষক বিক্ষোভ মিছিল
আলোকচিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
কালচারাল ফেস্ট, সাহিত্য ও স্মৃতিলিখন প্রতিযোগিতা
শহীদদের নামে পাঠাগার স্থাপন
সাক্ষাৎকার ও পডকাস্ট শিরোনামে ‘ত্যাগীদের চোখে আগামীর বাংলাদেশ’
‘Think Back to 36 July’ নামের অনলাইন ক্যাম্পেইন
বিশেষ সাহিত্য সাময়িকী ও প্রকাশনা কার্যক্রম
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার রক্তঝরা প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থান। শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, শান্ত, আলী রায়হানসহ অনেক তরুণের আত্মত্যাগেই লেখা হয়েছে এ আন্দোলনের ইতিহাস। তিনি এটিকে শুধুমাত্র ছাত্রশিবিরের নয়, গোটা জাতির স্বপ্ন ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান ছিল ফ্যাসিবাদ, জুলুম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক সাহসী তরুণ প্রজন্মের সংগ্রাম। আজও সেই স্পিরিটকে বুকে ধারণ করে আমরা একটি ইনসাফভিত্তিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অটল।”
শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, “আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির নামে সহিংসতা, অনিয়ম ও দলীয়করণের চর্চা চলছে। প্রকৃত ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক চর্চা ও ছাত্রসংসদভিত্তিক নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করা।”
তিনি অভিযোগ করেন, আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষাঙ্গনে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বিভেদ, দায় এড়ানো ও অনীহা। এই প্রেক্ষাপটে ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি জাতীয় ঐক্যপ্রসূত ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
সরকারের উদ্দেশে জাহিদুল ইসলাম আহ্বান জানান, “জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাধীন ছাত্রসংসদ নির্বাচন চালুর মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ছাত্রশিবির প্রতিবছর ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। এবারের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচিকে আরও ব্যাপক ও অংশগ্রহণমূলক করতে জোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংগঠনের নেতারা।
