ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা: বিভক্ত রাজনীতি, স্পষ্ট নয় সরকারের অবস্থান

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ দানা বাঁধছে। বিএনপি ও এর মিত্রদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখন ভোটের সময়, পদ্ধতি ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যেও স্পষ্টতা নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ১২ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে যৌথ ঘোষণা দেন, তারপরও অনিশ্চয়তা কাটেনি।
ঘোষণার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দল নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করলেও গত কয়েক সপ্তাহে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে নানা মতপার্থক্য ও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এতে করে তৃণমূল পর্যায়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।
নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে বিভাজন
এদিকে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (PR) নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি ইসলামপন্থী দল এবং কিছু বাম দল জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি জানিয়েছে। তবে বিএনপি ও তার মিত্ররা সরাসরি ভোটের প্রচলিত ব্যবস্থার পক্ষেই রয়েছে।
এই বিভক্তির মধ্যে আবার কেউ কেউ সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক ভোটের পক্ষে, কেউ নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোট চান। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংসদের নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোট এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব দিলেও, বিএনপি সেই প্রস্তাবেও আপত্তি জানিয়েছে।
ভোটের অনিশ্চয়তা: কারণগুলো কী?
সরকারের দোলাচল: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের ভেতরেই এখনও পরিষ্কার কৌশল গঠিত হয়নি। নির্বাচনের তারিখ ও পদ্ধতি নিয়ে সরকারের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে ধোঁয়াশা বাড়ছে।
দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান: ভোটের পদ্ধতি, সময় ও পূর্বশর্ত নিয়ে দলগুলোর ভিন্নমত রাজনীতিতে বিভক্তি তৈরি করছে, যা অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ভোটারদের আগ্রহহীনতা: সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও নির্বাচনী উত্তাপ তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর দোলাচল সেই অনাগ্রহকে আরও জোরদার করছে।
নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে– এই অবস্থান থেকেই ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল সময়সীমা নির্ধারিত হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কী পদ্ধতিতে ও কবে হবে, তা নিয়ে এখনো রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, নির্বাচন ঘিরে নানা ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য অনিশ্চয়তা তৈরি করা হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তনের দাবি এখন রাজনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। এর মাধ্যমে কেউ কেউ নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় বলেও আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকার বলছে, নির্বাচন সময়মতোই হবে এবং কোনো প্রকার বিলম্বের চিন্তা নেই।
