আ.লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ৪৪ সচিব ও ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সচিবালয়ে থাকা আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ৪৪ আমলা ও ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে ‘জুলাই ঐক্য’।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সচিবালয়ে ও প্রশাসনে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসরদের তালিকা প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে জুলাই ঐক্য। তারা সচিবালয়ে কর্মরত আওয়ামী লীগের দোসরদের চলতি মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুতির দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে শুধু নয়, গত সাড়ে ১৫ বছর সচিবালয়ের আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেভাবে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছিল, তারা এখনো সচিবালয়সহ বিভিন্ন স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ সময় শহীদ মুহতাসির রহমান আলিফের বাবা মোহাম্মদ গাজীউর রহমান তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের নাম পড়ে শোনান। তালিকায় ৪৪ জন আমলার নাম রয়েছে, যাদের আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপে কালচারাল ফ্যাসিস্ট, শিক্ষাঙ্গন, চিকিৎসাঙ্গন, আইনাঙ্গন এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সেক্টরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে জুলাই ঐক্য।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে আট দফা দাবি জানিয়েছে জুলাই ঐক্য। দাবিগুলো হচ্ছে-
১। আগামী ৩১ মের মধ্যে তালিকায় উল্লিখিত সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগের সব দোসরকে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে।
২। তিন সরকারি কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে।
৪। দেশের তথ্যপাচারকারী ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী এবং সহযোগিতাকারী সব আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সবার ব্যাংক হিসাব ও অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে। স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬। আগামী ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সব স্বৈরাচারের দোসরের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
৭। আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না। আগামী ৩১ মে মধ্যে এই ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে।
৮। আগামী ৩১ মের মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারা এখন কোথায় আছে এবং কতজন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছে, তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে। তালিকায় মোট ৪৪ জন আমলার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাদের ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘জুলাই ঐক্য’। তারা হলেন—
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমূল আহসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহানা আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এমদাদুল্লাহ মিয়া, ভূমি আপিল বোর্ডের সচিব মো. ইব্রাহিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. নাজমা মোবারেক, ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. মুশফিকুর রহমান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন সদস্য মো. রুহুল আমিন, দুর্নীতি দমন কমিশন সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন চেয়ারম্যান মো. আমিনুল আহসান, বিপিএটিসি র্যাকটর সচিব সাঈদ মাহবুব খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. মোকাব্বের।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাহদুর রহমান, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) ড. মো. শহিদুল্লাহ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টও (সচিব) ড. মো. ওমর ফারুক, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব, এ.এইচ.এম শফিকুজ্জামান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসারন আফরোজ।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (চুক্তিভিত্তিক) মোহাম্মদ জয়নুল বারী, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান (চুক্তিভিত্তিক) মো. মুসলিম চৌধুরী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী।
বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (সচিব) শরিফা খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), জাহেদা পারভীন, ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, প্লানিং কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এ.এম আকমল হোসেন আজান, প্লানিং কমিশনের সদস্য, ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) সুকেশ কুমার সরকার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
