স্ত্রীসহ সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম আটক

শেরপুরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা ও তার স্ত্রীকে আটক করেছে ছাত্র-জনতা। এরপর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের থানায় পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমি রেজিস্ট্রির সময় স্থানীয় ছাত্র-জনতা রেজাউল করিম হীরাকে ঘিরে ফেলেন। পরে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরাও সেখানে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাবেক মন্ত্রী ও তার স্ত্রীকে থানায় নিয়ে যায়।
শেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান উজ্জ্বল বলেন, এই ভূমি দস্যু অবৈধ আওয়ামী লীগের আমলে ভূমিমন্ত্রী ছিলেন। জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করি।
শেরপুর জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাশেম সিদ্দিকী বাবু বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধ ভূমিমন্ত্রী মানুষের কাছ থেকে দখল করা ভূমি এখানে রেজিস্ট্রি করতে আসলে আমরা তাকে আটক করি। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা তার বিচার চাই।
এ সময় সাবেক ছাত্রদল নেতা ডিয়ন, শেরপুর শহর শ্রমিক দলের সভাপতি মাসুদুর রহমান নয়ন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম সানি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নিয়ামুল হাসান আনন্দসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, রেজাউল করিম হীরা সাবেক মন্ত্রী। তিনি বয়স্ক এবং বর্তমানে অসুস্থ। তার সঙ্গে থাকা স্ত্রীও অসুস্থ। শেরপুরে তারা ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন। এ সময় ছাত্র-জনতা জমায়েত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মব তৈরির শঙ্কায় তাদের থানায় নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে শেরপুরে কোনো মামলা নাই।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএম বলেন, আমরা এখনো বিষয়টি অবগত নই। তবে সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিম হীরার নামে জামালপুরেও কোনো মামলা নাই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে রেজাউল করিম হীরার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, জমি রেজিস্ট্রির একটি বিষয় নিয়ে তিনি শেরপুরে এসেছিলেন। তার সঙ্গে একটি সাদা রঙের বিলাসবহুল পাজেরো গাড়ি ছিল। উত্তেজিত জনতা তার গাড়ির চাকা ছিদ্র করে দেয়।
রেজাউল করিম হীরা প্রথম সংসদ নির্বাচন করেন ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। তবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত হওয়া সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালে পুনরায় বিএনপির সিরাজুল হককে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৯ সালে হাসিনা দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা গঠন করলে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি-জেপির বাবর আলী খানকে ১৯ হাজার ৩৪৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।
১ মার্চ দশম সংসদের ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া দলীয় নির্দেশে প্রত্যাহার করে নেন।
