মনোবিদের মতে চারটি প্রশ্নের উত্তরে জানা যাবে সঠিক মানুষের সঙ্গে আছেন

প্রথম দেখায় কোনও মানুষকে পুরোপুরি জানা যায় না। সম্পর্কের শুরুর দিকের আবেগে অনেক কিছুই স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। কিন্তু কিছুদিন পার হলেই মনে প্রশ্ন জাগে—আমি কি সত্যিই সঠিক মানুষটির সঙ্গে আছি? এই সম্পর্ক কি আমাকে সুখী করছে? ফোর্বসের প্রতিবেদনে সঠিক সঙ্গী জানা যায় কিছু প্রশ্নের জবাবেই। মনোবিদের মতে চারটি প্রশ্নের জবাবে বলে দিবে আপনার সঙ্গী নির্বাচন সঠিক কি না।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রশ্নগুলো সম্পর্ক যাচাইয়ের নির্ভরযোগ্য উপায়। তবে এই প্রশ্নগুলো সরাসরি আপনার সঙ্গীকে নয়, বরং আপনাকে ঘিরে। কারণ একটি সম্পর্ক তখনই সফল হয়, যখন আপনি নিজের মতো করে বাঁচতে পারেন, নিজের চাওয়াগুলোকে সম্মান করতে পারেন এবং নিজেকে বিকশিত করতে পারেন। এই চারটি প্রশ্ন হলো:-
১. নিজের মনের কথা প্রকাশ করার মানসিকতা: সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক নিরাপত্তা। আপনি যদি নিজের অনুভূতি, চিন্তা, দুর্বলতা বা স্বপ্নের কথা নির্ভয়ে বলতে না পারেন, তবে সেই সম্পর্ক নিয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। যখন আপনি জানেন, আপনার কথা বললে কেউ ব্যঙ্গ করবে না, অপমান করবে না বা উপেক্ষা করবে না—তখনই আপনি নিজের মতো করে কথা বলতে পারেন। মানসিকভাবে নিরাপদ এমন সম্পর্কেই গড়ে ওঠে গভীর ভালোবাসা ও বিশ্বাস। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ বিশ্বাস করেন তাদের সঙ্গী তাদের অনুভূতির প্রতি আন্তরিক ও যত্নশীল, তারা আরও বেশি খোলামেলা হতে পারেন এবং সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
২. সঙ্গী কি প্রকৃত অর্থেই সদয়: আপনার সঙ্গী কেবল আপনাকে নয়, অন্য মানুষদের প্রতিও কেমন আচরণ করেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা কি রিকশাচালক, দোকানদার বা ওয়েটারের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করেন? তারা কি রাগের সময়েও নিয়ন্ত্রণ হারান না? একটি মানুষের প্রকৃত রূপ দেখা যায় তখন, যখন সে চাপে থাকে বা অসন্তুষ্ট হয়। সঠিক মানুষ সেজন্যই, যিনি রাগের মধ্যেও দয়া হারান না। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে—যেসব দম্পতি ঝগড়ার মধ্যেও সদয় ও সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ বজায় রাখেন, তাদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। সতর্কভাবে খেয়াল করুন আপনার সঙ্গী কি শুধু আপনার ভালো সময়ের সঙ্গী, নাকি খারাপ সময়েও সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে না রেখে খারাপ ব্যবহার করে।
৩. সম্পর্কে যাওয়ার পর নিজের পরিবর্তন: মনোবিদের মতে, একটি সম্পর্ক তখনই অর্থবহ, যখন সেটি আপনাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সম্পর্কে যাওয়ার আগে হয়তো নিজের পছন্দমতো কাজ করতেন। কিন্তু সম্পর্কে যাওয়ার পরই সঙ্গী আপনার পছন্দ বাদ দিতে বলছেন এমন কিছু হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজর রাখতে বলছেন মনোবিদরা। হয়তো সঙ্গীর কথায় আপনি নিজেকে ছোট মনে করতে শুরু করেছেন। আপনি যদি তার সামনে চুপচাপ থাকেন, নিজের কথা বলতে ভয় পান, হাসি থামিয়ে দেন বা নিজের স্বপ্নগুলিকে গোপন রাখেন—তবে বুঝে নিতে হবে, আপনি নিজের স্বাভাবিক রূপ হারিয়ে ফেলেছেন। ভালোবাসার সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত, যেখানে একজন আরেকজনকে উৎসাহিত করেন, নিজের স্বপ্ন পূরণে সাহস জোগান। সঠিক মানুষ আপনার পেছনে টানেন না, বরং সামনে এগিয়ে দেন।
৪. সঙ্গীর সঙ্গে পরিবার এগিয়ে নেয়ার ইচ্ছা: দুজন মানুষ সম্পর্কে গিয়ে সময়ের সঙ্গে নিজেদের পরিবার নিয়ে ভাবতে শুরু করে। মনোবিদরা বলেন, যে মানুষটার সঙ্গে সম্পর্কে আছেন তার সঙ্গে ভবিষ্যতে পরিবার গঠন করতে চান কিনা সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আপনার জবাব নিজের চিন্তা সহজ করে দেয়। কারণ, এই প্রশ্নের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন—আপনি তার ওপর কতটা আস্থা রাখতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যে পুরুষরা ভবিষ্যতে বাবা হতে চান বলে জানান, তাদের প্রতি নারীরা বেশি আস্থা ও আকর্ষণ অনুভব করেন। এর পেছনে রয়েছে নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব ও মানসিক সমর্থনের আকাঙ্ক্ষা। আপনি যদি বিশ্বাস করেন, তারা আপনার সন্তানের ভালো অভিভাবক হতে পারবেনতবে আপনি একজন সঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছেন।
সম্পর্ক মানেই কেবল ভালোবাসার আদান-প্রদান নয়, এটা আত্ম-অন্বেষণের একটি জায়গা, যেখানে আপনি নিজেকে খুঁজে পান আরেকজনের চোখে। উপরের চারটি প্রশ্ন আমাদের শেখায় সম্পর্ককে শুধু রোমান্টিকতার চোখে নয়, আত্মিক ও বাস্তবতার আলোয় দেখার দরকার আছে। একটি সত্যিকারের সম্পর্ক কখনোই আপনাকে বদলাতে বাধ্য করে না, বরং আপনাকে নিজের সেরা রূপে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।