সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে কিশোর মাহাফুজুরের মৃত্যু, গ্রামে শোকের ছায়া

ঝিনাইদহের সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে সাপে দংশনে মাহাফুজুর রহমান (১৬) নামের এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মাহাফুজুর রহমান ওই গ্রামের মতিয়ার রহমান মতির একমাত্র ছেলে। স্থানীয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি তালগাছ থেকে মাহাফুজ একটি বিষধর সাপ ধরে এনে টিফিন বাটিতে রাখে। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে সে আবার তালগাছের কাছে গিয়ে সাপ নিয়ে খেলতে থাকে। এ সময় অসাবধানতাবশত সাপটি তাকে ছোবল দেয়। প্রথমে সে স্থানীয়ভাবে পরিচিত কিছু গাছের পাতা ঘষে ও নিজেই মুখ দিয়ে বিষ টেনে বের করার চেষ্টা করে। এতে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। মাহাফুজের সঙ্গে থাকা বন্ধু সোহান দ্রুত পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়। অসুস্থ অবস্থায় বিকেল ৩টার দিকে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রাত ১০টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার গভীর রাতে মাহাফুজের মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তার মা, আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম মিঞা বলেন, “নিজের সামান্য ভুলের কারণে এমন একটি প্রাণ চলে গেলো। সাপ নিয়ে কখনোই খেলা করা উচিত নয়। বিষয়টি থেকে সবাইকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।” ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জান্নাত-আরা বলেন, “সাপে কামড়ানোর অনেক পরে কিশোরটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা চললেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুরে পাঠানো হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।”
বুধবার সকালে মাহাফুজুর রহমানের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় পারিবারিক কবরস্থানে। জানাজায় অংশ নেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম মিঞা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, বিষয়খালী শহীদ মোস্তফা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শাহ মো. এনামুল হক ফয়েজি, স্থানীয় ব্যবসায়ী দবির আলীসহ শতাধিক গ্রামবাসী।
এ ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কিশোর মাহাফুজের অকাল মৃত্যু যেনো সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে সবার কাছে— জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনোই বিপজ্জনক প্রাণীর সঙ্গে খেলা করা উচিত নয়।