‘নতুন দল গঠনের হুমকি ইলন মাস্কের: ট্রাম্পের করবিল পাস হলে 'আমেরিকা পার্টি'

যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন কিছুদিন আগেই। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে সরে এসে এবার তিনি আরও সরব এবং আক্রমণাত্মক। সোমবার (৩০ জুন) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (X) একাধিক পোস্টে তিনি ট্রাম্প-সমর্থিত বিতর্কিত করবিলের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বিলটি সিনেটে পাস হলে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হুমকি দেন।
‘শেষ কাজ হিসেবেও করব’: মাস্কের কড়া হুঁশিয়ারি - মাস্ক লিখেছেন,
“যেসব কংগ্রেস সদস্য খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, অথচ এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঋণ বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিচ্ছেন, তাঁদের উচিত লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকা। আমি যদি জীবনের শেষ কাজ হিসেবেও কিছু করি, তাহলেও নিশ্চিত করব—এরা যেন প্রাথমিক নির্বাচনে হেরে যান।”
‘আমেরিকা পার্টি’: রাজনীতিতে মাস্কের প্রত্যাবর্তন - মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই মাস্ক ঘোষণা দেন,
“এই পাগলাটে খরচের বিল পাস হলে পরদিনই ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন দল গঠন করা হবে।”
মাস্কের ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রে এখন এক ধরনের “দ্বিদলীয় তকমাধারী একদলীয় শাসন” চলছে, যেখানে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হারিয়ে যাচ্ছে। তাঁর মতে, এখন প্রয়োজন এমন একটি দল, যারা “মানুষের পক্ষে সত্যিকারের অবস্থান নেবে”।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত করবিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার মাস্ক। চলতি মাসের শুরুতে এই ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধও তৈরি হয়। মাস্ক অভিযোগ করেছেন, এই বিলের আওতায় খরচের লাগামহীনতা যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণের দাসত্বে ঠেলে দেবে।
তিনি আরও বলেন, “এই বিল পাস হলে আমেরিকার ঋণ বেড়ে রেকর্ড ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আমরা এখন বসবাস করছি একটি ‘পর্কি পিগ পার্টি’র শাসনে!”
যদিও সম্প্রতি মাস্ক বলেছিলেন, তিনি রাজনীতিতে খরচ কমাবেন, বাস্তবে তিনি ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের পক্ষে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি খরচ করেছেন।
ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, মাস্কের প্রতিষ্ঠিত ‘আমেরিকা পিএসি’ সর্বশেষ মার্চ মাসে ফ্লোরিডার দুটি বিশেষ নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীদের সহায়তা করে।
একসময় ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি—সীমান্ত বন্ধ, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো ইত্যাদির সমর্থক ছিলেন মাস্ক। কিন্তু অর্থনৈতিক ও বাজেট ইস্যুতে বর্তমানে হোয়াইট হাউস এবং রিপাবলিকান নেতৃত্বের সঙ্গে তার স্পষ্ট মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্ক যদি সত্যিই ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠন করেন, তাহলে সেটি শুধু রাজনৈতিক আঘাত নয়, বরং মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি প্রযুক্তিনির্ভর পপুলিস্ট আন্দোলনের রূপ নিতে পারে।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—এই দল বাস্তবে নির্বাচনী মাঠে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে এবং এটি কাকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে—ডেমোক্র্যাট না রিপাবলিকান?