গাজীপুরে ইমাম রইস উদ্দিনকে হত্যার বিচারের দাবিতে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন

গাজীপুর মহানগরের পূবাইলে মসজিদের ইমাম মাওলানা রইস উদ্দিনকে নির্যাতন ও পরে কারা হেফাজতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন হয়েছে। শনিবার (০৩ মে) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের আয়োজন করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ঐক্য পরিষদ ও কিশোরগঞ্জ জেলার সকল দরবার শরীফের পীর, আলেম ওলামা, মুরিদ, ভক্ত, আশেকানবৃন্দ।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ঐক্য পরিষদ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন দরবার ও খানকা শরীফ হতে আগত বিভিন্ন পীর মাশায়েখদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন সিদ্দীকিয়া দরবার শরীফের পীরজাদা ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাধারণ সম্পাদক মৌলানা মো: শফিকুল ইসলাম সিদ্দীকি, বৌলাই তরফিয়া দরবার শরীফের সাজ্জাদনশীন পীরজাদা সৈয়দ ইয়াছিন, চকমতি দরবার শরিফের পীরজাদা মোবাশ্বীর হাসান ফয়সাল, মুফতি রুহুল আমিন , আব্দুল হক ফকির, আলহাজ্ব রিয়াজউদ্দিন মাস্টার, মাওলানা রুমান আশরাফী, আশরাফুল ইসলাম, শাহ মোহাম্মদ বাতেন শাহ, পীরজাদা আসলাম শাহ প্রমুখ পীর মাশায়েখ বৃন্দ। এতে সঞ্চালনা করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কিশোরগঞ্জের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাওলানা মুফতি বোরহান উদ্দিন জালালী।
বক্তারা বলেন, আমরা যারা তরিকা পন্থী তারা শান্তিপ্রিয়। মাওলানা রইস উদ্দিনকে মব জাস্টিজের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আইন যদি থাকে তবে সে আইন সুন্দরভাবে পুলিশের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করুন। আজকে শান্তিপ্রিয় তরিকা পন্থীদের মজলুমে রুপান্তর করা হচ্ছে। আপনারা লক্ষ লক্ষ কোটি মানুষকে মজলুমে রুপান্তর করবেন না। মজলুমের কান্নাকে ভয় করুন। মজলুমের কান্না কোন জায়গায় আঘাত করে আপনারা সবাই জানেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দারাবাদ এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রঈস উদ্দিনকে মতাদর্শগত বিরোধের জেরে মসজিদ কমিটির ইন্ধনে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ মব তৈরি করে। তারা তাকে মসজিদের ভেতরে গাছের সঙ্গে বেঁধে দীর্ঘ সময় ধরে পিটিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। এরপর জোরপূর্বক মিথ্যা স্টেটমেন্ট নিয়ে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশও তাকে বিনা চিকিৎসায় থানায় আটকে রাখে এবং পরে বিকেলে কারাগারে পাঠায়। পরে কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়।
বক্তারা এ ঘটনাকে নজিরবিহীন নিপীড়ন হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি শুধুমাত্র একজন ইমামের ওপর নির্মম সহিংসতা নয়, বরং একজন নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার হরণের জ্বলন্ত উদাহরণ। এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় মব এবং পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ উভয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
এর আগে বলাৎকারের অভিযোগ তুলে ওই ইমামকে গত ২৭শে এপ্রিল সকালে গণপিটুনি দেন স্থানীয়রা। এ সময়ে গলায় জুতার মালা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে পুবাইল থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে অসুস্থ হয়ে রাতেই তার মৃত্যু হয়। পরে এ মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করে নিহতের পরিবার। ইমামকে নির্দোষ দাবি করে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে গত ২৮শে এপ্রিল রাতে পুবাইল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী। অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত রইস উদ্দিন (৩৫) চাঁদপুর জেলার মতলব থানার বাদশা মিয়ার ছেলে। গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকায় আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।