চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ৬ গুণ বাড়ানোর লক্ষ্য : প্রেস সচিব

বাংলাদেশকে আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্রে (রিজিওনাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব) পরিণত করার লক্ষ্য নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিকে ‘প্রথম শর্ত’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দরটির কনটেইনার ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অভিজ্ঞ বন্দর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, যেখান থেকে শত শত কোটি ডলারের (বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (২ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এসব পরিকল্পনার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মূল ম্যান্ডেট হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করা। দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিতে এবং তরুণদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি করতে এটি প্রয়োজন।’
তিনি উল্লেখ করেন, এই উৎপাদন কেন্দ্র শুধু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নয়, বরং পুরো অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটাবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করেই এই হাব গড়ে তোলা হবে এবং এখানে উৎপাদিত পণ্য দেশ ও বিদেশের বাজারে রপ্তানি হবে।
বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে প্রেস সচিব বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও রপ্তানিকারকদের আকৃষ্ট করতে বন্দরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে হবে। কম খরচে উৎপাদনের সুবিধা নিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসবে। কিন্তু তারা চাইবে যতটা সম্ভব দ্রুত পণ্যটি তাদের দেশে নিয়ে যেতে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দুবাইতে যেখানে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১ মিনিট লাগে, বাংলাদেশে সেখানে ৫ মিনিট লাগছে। এই ব্যবধান কমাতে হবে।’
এজন্য বিশ্বের সেরা বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা সেই কোম্পানিগুলোর সঙ্গেই কথা বলছি, যাদের পুরো পৃথিবীতে বন্দর ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠিত রেকর্ড আছে। কোনো অনভিজ্ঞ বা অখ্যাত কোম্পানি নয়। যারা ৭০-৮০টি বন্দর পরিচালনা করছে, বিভিন্ন মহাদেশে কাজ করছে, তাদের সঙ্গেই কথা বলছি। আমরা চাইছি, এ বিষয়ক চুক্তি সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করতে।’ তিনি জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামের লালদিয়া, বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল ও মাতারবাড়ীসহ সব টার্মিনাল মিলিয়ে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ১২ লাখ ৭০ হাজার টিইইউস (বিশ ফুট সমতুল্য ইউনিট)। সরকারের পরিকল্পনা হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ ৬০ হাজারে উন্নীত করা। তিনি যোগ করেন, বন্দরের দক্ষতার সঙ্গে সংযুক্ত সড়কসহ সবকিছুরই সমন্বিত উন্নয়ন করা হবে।
মিয়ানমার সীমান্তে সম্ভাব্য মানবিক করিডোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে এবং মিয়ানমারের সম্মতি লাগবে। ‘আমরা বলেছি যে মানবিক করিডোরে আমরা ইচ্ছুক, যদি জাতিসংঘ কোনো উদ্যোগ নেয়। তা ছাড়া এ ধরনের বিষয়ে দুটি দেশের (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) সঙ্গে কথা বলতে হয়। জাতিসংঘ উদ্যোগ নিলে এবং মিয়ানমার রাজি হলে, তখন বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত জানাবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগের আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) রোহিঙ্গা নাম নিতেও ভয় পেত। মিয়ানমারের লোকেরা বলত রোহিঙ্গারা বাঙালি, তারাও সেই কথা বলত। রোহিঙ্গা নাম নিতে ভয় পেয়ে তারা নাম দিয়েছিল এফডিএমএন (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক)। রোহিঙ্গা নামটি ব্যবহার না করার অর্থ হলো আপনি রোহিঙ্গাদের অধিকারে বিশ্বাস করেন না। তাই এ বিষয়ে কথা বলার কোনো অধিকারই আওয়ামী লীগের নেই।’
আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না-এমন অভিযোগের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘অপরাধ করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। কে আওয়ামী লীগের দোসর, সেটা দেখে সরকার ব্যবস্থা নেয় না। সরকার যখন দেখবে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে যে-ই হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।