কুকুর মেরে ফেলার হুমকি, নোয়া ২৪ সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ক্যাম্পাসে অসহায় প্রাণীদের খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘পকেট গেট’-এর বিক্রেতা শিশিরের বাকবিতণ্ডা, হুমকি এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুজন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের কুকুর ও বিড়ালদের খাবার দিয়ে আসছেন এবং সম্প্রতি সালাম হলের সামনে পাওয়া একটি সংক্রমিত কুকুরছানার চিকিৎসাও নিজ উদ্যোগে চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার দুপুরে টিউশনের উদ্দেশ্যে পকেট গেট এলাকায় গেলে বিক্রেতা শিশির উচ্চস্বরে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং ক্যাম্পাসে কুকুর আসার জন্য তাকে দায়ী করেন। শিশির দাবি করেন, তার একটি মুরগি কুকুরে খেয়ে ফেলেছে, যার জন্য শিক্ষার্থীকে দায় নিতে হবে।
ভুক্তভোগী আরো জানান, তিনি কুকুর আনেন না, বরং কুকুর স্বাভাবিকভাবেই যেদিকে খাবার পায় সেদিকে ছুটে যায়। তবুও, তিনি ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি ছিলেন এবং শিশিরকে মুরগির দাম বলার অনুরোধও করেন। তবে শিশির এতে কর্ণপাত না করে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং প্রকাশ্যেই কুকুর মারার হুমকি দেন।
শুধু এই ঘটনা নয়, শিশিরের বিরুদ্ধে পূর্বেও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী জানায়, পণ্যের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় শিশির তাকে কান ধরে উঠবস করানোর হুমকি দেন। এছাড়া তার দোকানে শিক্ষার্থীদের ফ্রিজজাত পণ্য হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে, যদিও তিনি প্রতি মাসে ৩০০ টাকা চার্জ নিয়ে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এসব ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং বড় একটি সিন্ডিকেটের অংশ। পকেট গেট এলাকায় ‘নোয়া ২৪’ নামে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এই সিন্ডিকেটের প্রভাব বেড়ে গেছে। দোকানদাররা এক হয়ে একচেটিয়াভাবে পণ্যের দাম নির্ধারণ করছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য মূল্যে পণ্য পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
শুধু মূল্যবৃদ্ধিই নয়, এই সিন্ডিকেটভুক্ত দোকানদারদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, গালমন্দ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণের অভিযোগও পাওয়া গেছে। দোকানদারদের ‘তুমি’ সম্বোধন, ধমকধামক দেওয়া এবং অবমাননাকর ভাষা প্রয়োগ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও গুরু বিক্রির সময় চর্বি মিশিয়ে ওজনে প্রতারণার অভিযোগও উঠেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, ২৫০ গ্রাম মাংসের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫০ গ্রাম চর্বি মেশানো হয়, যা স্পষ্টত প্রতারণা।
শিক্ষার্থীরা দাবি , ক্যাম্পাসে আশেপাশে ব্যবসা চলবে কিন্তু তা হতে হবে শিক্ষার্থীদের সম্মান, অধিকার ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। তারা অবিলম্বে ‘নোয়া ২৪’ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এবং দোকানগুলোর কার্যক্রম প্রশাসনিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ইয়াসিন আরাফাত সজল বলেন,
৫ আগস্টের পর ‘নোয়া ২৪’ নামে যে সিন্ডিকেট গঠিত হয়েছে, তা আমাদের ক্যাম্পাসের দোকানগুলোকে একচেটিয়া দামের ফাঁদে ফেলেছে। আগে যেখানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা সাশ্রয়ী দামে পেতাম, এখন সবাই একই দাম রাখছে। শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়ছে প্রতিদিন। শুধু তাই নয়, এখন দোকানদারদের আচরণও অনভিপ্রেত। শিক্ষার্থীদের প্রতি অসন্মানজনক ভাষা, অশ্রাব্য গালি, এমনকি মেয়েদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার চলছে। একজন দোকানদার কখনোই শিক্ষার্থীদের 'তুমি' করে অপমান করতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি কুকুরকে কেন্দ্র করে একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে দোকানদারের অশোভন আচরণ, হুমকি এবং ‘কুকুর মেরে ফেলবে’—এমন মন্তব্য, কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কুকুর খাওয়ানো বা না খাওয়ানো ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়, এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
এমনকি গরুর মাংসে চর্বি মিশিয়ে বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। এটা প্রতারণা।
আমরা চাই, নোয়া ২৪ নামে এই সিন্ডিকেট অবিলম্বে ভেঙে দেওয়া হোক। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার ফিরে আসুক।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী আনোয়ার সাদাত শিশির বলেন, “আমি কুকুর মেরে ফেলার কথা বলিনি। তবে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে যাতে কেউ আমাকে দোষারোপ না করে, সেজন্যই আমি আগে থেকেই সতর্ক করেছিলাম। ওই শিক্ষার্থীকে আমি কোনো গালমন্দ করিনি। বিষয়টি আমি শান্তভাবে ও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছি।
ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ১০ টাকা এবং মাসে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নিয়ে থাকি। তবুও আমি ফ্রিজে রাখা খাবারের দায়িত্ব নিতে পারি না। কারণ, এখানে বেশির ভাগ সময় মেয়েরা খাবার রাখে এবং আমি সবাইকে চিনি না। আবার অনেকে খাবার থেকে মুখ মেরে যায়—তাদের চেনাও সম্ভব না।’
মুরগির দাম বেশি রাখার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সোনাপুরের তুলনায় আমাদের এখানে মুরগির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি হতে পারে। সোনাপুরে দৈনিক প্রচুর পরিমাণ মুরগি বিক্রি হয়, কিন্তু আমরা সে পরিমাণ বিক্রি করতে পারি না। আমাদের দোকান ভাড়া, শ্রমিকের বেতনসহ অন্যান্য খরচ আছে—সেই বিষয়গুলোও তো আমাদের বিবেচনায় রাখতে হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান বলেন, "শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করে খুব শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।