এসএসসি পাস করেছেন সাংবাদিক দম্পত্তি

কিশোরগঞ্জ কুলিয়ারচরে বিয়ের ৩১ বছর পর এক সঙ্গে পরিক্ষা দিয়ে একই পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেছেন সাংবাদিক দম্পত্তি মুহাম্মদ কাইসার হামিদ (৫১) ও সাংবাদিক মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার (৪৪)। তারা দু’জনেই চলতি ২০২৫ সালের দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে (জিপিএ- ৪.১১) পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
দুজনের বাবা পেশায় শিক্ষক এবং পরিবারের সকলেই শিক্ষিত হলেও তাদের মাধ্যমিকের গণ্ডি পার না হওয়া নিয়ে, তাদের মনে দুঃখ ছিলো। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তাঁরা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন। তাদের পাঁচ সন্তান সবাই পড়ালেখা করছেন। পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী পাস, মেজো মেয়ে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরীক্ষা দিচ্ছেন, ছোট মেয়ে মাইমুনা সুলতানা প্রীতি নার্সিং-এ অধ্যায়নরত।এবং দুই ছেলে ৯ম শ্রেণিতে ও ৭ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।
এই সাংবাদিক দম্পতির শিক্ষাজীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে। ওই মাদ্রাসা থেকে তারা দু'জন কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে এ সফলতা অর্জন করেন।
কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচরের গোবরিয়া গ্রামে। রোকেয়া জেলার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ তাদের বিয়ে হয়।
কায়সার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং রোকেয়া আক্তার দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আছেন।
কাইসার হামিদ প্রথম বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে ৩০ বছর আগে। বিয়ের আগে থেকেই আমি সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত। এসএসসি পাস না হয়ে কীভাবে সাংবাদিকতা করছি, এ বিষয়টি নিয়ে অনেকই বিভিন্ন প্রশ্ন তুলতেন এবং ইচ্ছে করে খোঁচা দিতেন। সমাজ থেকে আমি অনেক ভালো কিছু পেয়েছি, কষ্ট ছিল কেবল পড়াশোনা নিয়ে।
তিনি বলেন, কুলিয়ারচর উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা'র
অনুপ্রেরণায় ও ছোট ভাই মো. আবদুল খালেক এর সহযোগিতায় স্বামী-স্ত্রী দুজনে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার স্বীদ্ধান্ত নেই এবং সফল হই। আগামীতে আমরা এইচএসসি এবং অনার্স-মাস্টার্স করার ইচ্ছে আছে বলে জানান এই দম্পতি।
পরীক্ষায় পাস করতে পেরে আনন্দিত সাংবাদিক রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এটা মনে মাঝে একটা কষ্ট হিসেবে ছিলো। সেই কষ্ট প্রায় তিন যুগ ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমরা দুজনই কষ্ট দূর করার উপায় খুঁজতাম। এটা বুঝতে পারি, কষ্ট দূর করতে হলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার বিকল্প নেই। সে কারণেই সাহস করে পরীক্ষা দিলাম এবং ফল পেলাম।’
বিলম্বে হলেও মা-বাবা এসএসসি পাস করায় খুশি সন্তানেরাও। দ্বিতীয় সন্তান জেসমিন সুলতানা বলেন, মা-বাবা দুজনই এসএসসি পাস করার বিষয়টি তাঁদের ভাইবোনদের অনেক আনন্দ দিচ্ছে।
বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার ল্যাব সহকারী আলতাফ হোসেন মানিক বলেন, ‘এই দম্পতির অধ্যবসায় আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা তাঁদের মঙ্গল কামনা করি।’
এদিকে লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, সাংবাদিক মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও সাংবাদিক মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। প্রায় শেষ বয়সে এসে সংসার সামলিয়েও তারা দুজনে যে নজির গড়েছেন, এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের সাফল্যে আমরা খুবই খুশি।
লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা সাংবাদিক দম্পতির এ সাফল্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,, “শিক্ষা কখনো থেমে থাকে না। বয়স বাধা নয়, মনোবলই আসল। এই বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়াটা খুব বিরল ও অনুপ্রেরণামূলক। তাঁদের দেখে অনেকেই নতুন করে পড়াশোনার সাহস পাবেন।’ আমি তাদের মঙ্গল কামনা করি।
