ভোলার গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ: সুপারি চাষে বাম্পার ফলন!
ভোলা সদরসহ বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সুপারি চাষ। ধান ও শাকসবজির পাশাপাশি এই উপজেলাগুলোর বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে বিশাল সুপারি বাগান, বাড়ির আঙিনা, বাগানবাড়ি ও পতিত জমিতে সারি সারি সুপারি গাছ দেখা যাচ্ছে।
সুপারি চাষের সুবিধা
একবার চারা রোপণ করলে দীর্ঘদিন ফলন পাওয়া যায়।
তুলনামূলকভাবে কম খরচে চাষ করা যায়।
বাজারে সুপারি চাহিদা বেশি, তাই চাষিরা সরাসরি পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পারছেন।
চলতি মৌসুমে এসব উপজেলার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে প্রতি বি (৩২০ পিস) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। জেলা থেকে সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হচ্ছে।
ভোলা জেলার সব উপজেলা মিলিয়ে স্থানীয় বাজারে সুপারির বেচাকেনা জমজমাট। উল্লেখযোগ্য বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে—
ভোলা সদর: ইলিশা হাট, জংশন বাজার, তুলাতুলি বাজার, পরীরহাট, কলপাড় বাজার
বোরহানউদ্দিন: সিকদার হাট, বোরহানগঞ্জ বাজার, মনিরাম বাজার, কুঞ্জের হাট
লালমোহন: গজারিয়া, কর্তারহাট, লর্ডহাডিঞ্জ, নাজিরপুর, মঙ্গলসিকদার, চতলা, রায়চাঁদ, ডাওরী
তজুমদ্দিন: তজুমদ্দিন সদর, চাঁদপুর বাজার, সোনাপুর বাজার, খাসেরহাট, গুরিন্ধা বাজার
চরফ্যাশন: দুলারহাট, চেয়ারম্যান বাজার, দক্ষিণ আইচা বাজার, নীলকমল বাজার, পাচকপাট বাজার, মাইনকা বাজার
স্থানীয় আড়তদাররা চাষিদের কাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে জেলা শহরের আড়তে বিক্রি করছেন।
ভোলা সদর পূর্ব ইলিশার চাষি মো. পারভেজ বলেন, “আমাদের প্রায় ২১০ শতাংশ জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এবার ফলন গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হলেও আকার কিছুটা ছোট। তবে লাভের সম্ভাবনা ভালো।”
বোরহানউদ্দিনের আড়তদার মো. বাবুল জানান, “জেলায় প্রায় ৩০০টি সুপারির আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন অন্তত ৫০-৬০ লাখ টাকার মতো সুপারি বেচাকেনা হয়। পাকা সুপারিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।”
সিকদারের চাষি মো. মহসিন বলেন, “এ বছর ফলন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম, তবে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত লাভ পাচ্ছেন। আকারভেদে বড় বি ৫০০ টাকা, মাঝারি ৪৫০ টাকা, ছোট ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
ভোলা জেলার উপ-পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, “জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বাগান আকারে সুপারি চাষ হয়েছে। এবার ফলন দুই থেকে তিনগুণ বেশি এবং পোকার আক্রমণও নেই। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।”
স্থানীয় কৃষি সচেতনরা মনে করেন, পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে আগামী কয়েক বছরে সুপারি ভোলা জেলার গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠবে। ধানের তুলনায় খরচ কম এবং দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক হওয়ায় সুপারি চাষে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।


