আন্দোলন কমিটির সংবাদ সম্মেলন : সুবিপ্রবির স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরেই করতে হবে

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরেই করতে হবে ঘোষণা দিয়েছেন জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির নেতারা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আরও ছয়টি দাবি উপস্থাপন করেছেন তাঁরা।
বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিগুলো জানান তাঁরা। দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন মনজুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব মুহাম্মদ মুনাজ্জির হোসেন।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জেলার সবার। এটি জেলা সদরে সুবিধাজনকস্থানে হবে এটা জেলাবাসীর প্রত্যাশা ও দাবি। কিন্তু শুরু থেকেই এটির স্থান নির্ধারণ নিয়ে এক ধরণের ষড়যন্ত্র চলছে। জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় করার চেষ্টা হচ্ছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরের সুবিধাজনক স্থানে প্রতিষ্ঠার দাবির পাশাপাশি তিনি আরও কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস অবিলম্বে জেলা শহরে স্থানান্তর, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসিকে প্রত্যাহার, সিলেটের কৃতি সন্তানদের মধ্য থেকে নতুন ভিসি নিয়োগ, ফ্যাসিবাদী সময়ে গঠন করা সিন্ডিকেট বাতিল করে সুনামগঞ্জে শিক্ষাবিদ, বিদ্যুৎসাহী ও সুধীজনের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন করা। জেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ডিঙি নৌকার আদলে উদ্ভট বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো বাতিল করে সুনামগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন লোগো করা। শান্তিগঞ্জে আওয়ালী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে থাকা অস্থায়ী ছাত্রী নিবাস অবিলম্বে জেলা শহরে স্থানান্তর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি হুমায়ুন মনজুর চৌধুরী বলেন, এই দাবির সঙ্গে পুরো সুনামগঞ্জ জেলার মানুষজন একাত্ম। আমরা চাই, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রোকেস লেইস বলেন, আমরা তিনটি স্থানের কথা উল্লেখ করেছি। এসব স্থানে প্রচুর সরকারি খাস জমি আছে। এতে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে। শান্তিগঞ্জে যেখানে ক্যাম্পাস করার চেষ্টা হচ্ছে তাতে বাণিজ্য করার চেষ্ঠায় আছে একটি পক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মো. শামস উদ্দিন ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, সদস্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির সদস্যসচিব মেহেদী হাসান। এ ছাড়া জেলার ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ উপজেলার প্রতিনিধিরা আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য দেন।
এর আগে একই দাবিতে সংগঠনের উদ্যোগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, নাগরিক মতবিনিয়ম, শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
জাতীয় সংসদে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন পাস হয় ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর। এরপর জেলা শহর সুনামগঞ্জের প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার একটি ভাড়া করা ভবনে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর ১২৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে পাঠদান। বর্তমানে সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাঠদান হচ্ছে।
প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান ‘শান্তিগঞ্জ’ উল্লেখ করায় বিষয়টি নিয়ে সব মহলে ক্ষোভ দেখা দেয়। জেলার সব সংসদ সদস্যগণ সংসদে কথা বলেন এবং জেলা সদরে স্থাপনের দাবি জানান। পরবতীর্তে সংসদে সুনামগঞ্জের ‘দেখার হাওরপাড়ে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হিসেবে আইনে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই হাওরপাড়ের কোনো উপজেলার এটি হবে সেটির কোনো উল্লেখ নেই। এই সুযোগে এটি জেলা সদর থেকে দূরে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় স্থাপনের চেষ্ঠা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
