বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর প্রশংসা, ইউনূসের উদ্যোগকে বৈশ্বিক দৃষ্টান্ত বললেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট

বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার। তিনি বলেন, ১৫০টি দেশ ও অঞ্চলে কাজ করলেও বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের গতি এবং সক্ষমতা ব্যতিক্রমী।
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
লরেন ড্রেয়ার বলেন, “আমরা বিশ্বের বহু দেশে কাজ করেছি। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা অন্য কোথাও দেখিনি। স্পেসএক্স পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।”
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এখন বর্ষার সৌন্দর্যে ভরা, কিন্তু বাস্তবতায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাই উন্নত কানেক্টিভিটির জন্য নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তির প্রয়োজন।”
তিনি জানান, পার্বত্য ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে ১০০টি স্কুলে অনলাইন শিক্ষা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষ যাতে ঘরে বসেই চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এতে তাদের চিকিৎসা ইতিহাস সংরক্ষণের সুবিধাও থাকবে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণে অনেক প্রবাসী ডাক্তার দেখাতে অস্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু দেশে থেকে বাংলাদেশের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারলে তারা মানসিকভাবে অনেক স্বস্তি পাবেন।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা এখানে ছোট ছোট যে উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিচ্ছি, সেগুলো চাইলে আপনারা বৈশ্বিক পরিসরে নিয়ে যেতে পারেন।”
এর জবাবে লরেন ড্রেয়ার বলেন, “আপনি যেভাবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারি—‘যদি অধ্যাপক ইউনূস তার দেশে পারেন, তাহলে আপনারাও পারেন।’”
অধ্যাপক ইউনূসের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান এবং সেবার বিকেন্দ্রীকরণে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও প্রশংসা করেন স্পেসএক্সের এই নির্বাহী।
তিনি বলেন, “সরকারি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আপনি যেভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, তা প্রশংসনীয়। আমি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করি, জানি দুর্নীতি কীভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনার দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই অর্থবহ।”
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট কনসালট্যান্ট রিচার্ড গ্রিফিথস, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
