নারী শ্রমিকরাই বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের চালিকা শক্তির প্রাণ

বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের চালিকা শক্তির প্রাণ নারী শ্রমিকরা৷ তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরী হয় বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের পোশাক।স্বল্প মূল্য ও ভালো মানের কারণে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা। বলা বাহুল্য বাংলাদেশে পোশাক খাতে শতকরা প্রায় ৮০ভাগ শ্রমিকই নারী।
তবে, নেতৃত্বে তাদের অংশগ্রহণ খুবই কম৷ কারখানায় কর্মী ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা এবং শ্রমিক সংগঠগুলোর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও নারীদের ব্যাপক অনিহা লক্ষ্য করা যায়।
অধিকাংশ কারখানায় পুরুষদের সমান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কোনো নারী শ্রমিক এসব দায়িত্ব পালন করছেন না৷ নারীরা ৮-১০ বছর ধরে অপারেটর পদেই রয়ে যান৷ অথচ, একজন পুরুষ কর্মী কম সময়েই নেতৃত্বস্থানীয় পদে কাজ করে থাকেন।
উৎপাদন লাইনে নারীর সংখ্যা বেশি থাকলেও, নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ বা সহায়তা তাদের খুব কমই দেওয়া হয়। ফলে, অনেকেই নিজেকে অযোগ্য মনে করেন, যদিও তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দক্ষতা বিদ্যমান।
নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ জানা গেছে৷ এসবের মধ্যে আছে—শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকা, সন্তানকে বেশি সময় দেওয়া, কাজ শেষে সংসারের দায়িত্ব পালন, ঝুঁকিমুক্ত থাকা, নারী অধিকার কর্মীর সংকট এবং মাতৃত্বকালীন সময় প্রভৃতি।
কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর শারমিন সুলতানা বলেন, নিজের পরিবার, সন্তান লালন পালন করা, এবং দায়িত্ব পালন সম্পর্কে মেয়েদের মধ্যে ভয় কাজ করে। মেয়েদের মধ্যে বড় কিছু হওয়ার অথবা বড় পদে যাওয়ার প্রবণতা কম দেখা যায়।
সুইং অপারেটর রেহেনা পারভীন জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকাই প্রধান বাধা এছাড়াও তাদের মাঝে একটি প্রবণতা কাজ করে সেটা হলো -পুরুষদের যেমন উপরের পদে কাজ করার একটা মানসিকতা থাকে যেটা নারীদের মধ্যে থাকে না। তারা চিন্তা করে কয়েক বছর পোশাক কারখানায় চাকরি করে কিছু টাকা সঞ্চয় হলে চাকরি ছেড়ে পরিবারের সময় দেওয়ার জন্য চলে যাবে।
তবে এ বিষয়ে আল- মুসলিম গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (হিউমান রিসোর্স এন্ড কমপ্লায়েন্স) আনোয়ার হোসাইন জানান, আমাদের মাঝে এখনো সংকীর্ণ মনোভাবের আবির্ভাব হয়েছে। নারীরা হয়তো শক্ত কাজ গুলো পারবেনা অথবা তাদেরকে দিয়ে সঠিক আউটপুট আনা সম্ভব না এমন একটা ভুল ধারণা অনেকের মাঝে কাজ করে। আর সে কারণেই নারী অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। সকল সেক্টরেই নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সমাজ ব্যবস্থার চিন্তা চেতনার প্রগতিশীলতা প্রয়োজন, তবেই নারীরা আরো এগিয়ে যেতে পারেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
উচ্চ পদ মানেই বড় দায়িত্ব, তাতে ভুল হলে চাকরি হারানোর আশঙ্কাও বেশি। অনেক নারীই নিরাপদ থাকার মানসিকতা থেকে নিচের পদে থেকে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু, সেটি তাদের পারিবারিক পিছুটান ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার বহিঃপ্রকাশ।