প্রিয়ন্তী দারিদ্র্যতাকে জয় করে জিপিএ-৫, কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায়

বন্ধুদের থেকে বই ধার করে সেখানে থেকে প্রশ্ন উত্তর লিখে নিয়ে এভাবে পড়াশোনা করতেন প্রিয়ন্তী। স্কুলে সহযোগিতা করতেন প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকগণ। তাছাড়া হতদরিদ্র ঘরের প্রিয়ন্তী টাকা না থাকায়, মানুষের হাত পা ধরে পরীক্ষার আগে প্রাইভেট পড়েছিলো সে। এখন তার চোখে মুখে স্বপ্ন পূরণের ছাপ দেখা যাচ্ছে কিন্তু পারবে কি এগিয়ে যেতে সেই প্রশ্ন দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ন্তীর দরজায়। যদিও মনে অনেক স্বপ্ন হতে চায় বিসিএস ক্যাডার।
প্রচণ্ড দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার প্রিয়ন্তী কুন্ডু। ফলাফলে সফল হলেও ভবিষ্যতে কলেজে ভর্তি ও পড়াশোনা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তার পরিবার। এছাড়াও কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়েই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ প্রিয়ন্তী কুন্ডুর পরিবার হতদরিদ্র।
প্রিয়ন্তী কুন্ডু রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার রাজবাড়ী বাজারের সুরেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেতর বাথরুমের টয়লেটের হাউজের ওপর টিন দিয়ে ঘিরে খুপড়ি ঘর বানিয়ে সেখানেই বসবাস করেন পিতা দীলিপ ও মাতা পপি রানী কুণ্ড। সাথে বড় ভাই সেখানেই থাকেন। প্রিয়ন্তী পড়াশোনা করতো পুঠিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। গতবারের মতো এ বছরেও পুঠিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের ফলাফল সন্তোষজনক মোট ৪৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তার মধ্যে প্রিয়ন্তী একজন। মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে এই প্রতিকূলতার মধ্যেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন প্রিয়ন্তী। তবে সাফল্যের পর শুরু হয়েছে নতুন লড়াই। পরিবারটি এখন চিন্তায় পড়েছে কলেজে ভর্তি এবং লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে। নেই প্রয়োজনীয় অর্থ, বই-খাতা বা কোচিংয়ের সুযোগ।
প্রিয়ন্তীর মা পপি ও বাবা দীলিপ জানিয়েছেন, মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। তারা আশা করছেন সমাজের কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসে, তাহলে প্রিয়ন্তীর শিক্ষাজীবন থেমে যাবে না। এছাড়াও বড় ছেলে পড়াশোনা করছেন লস্করপুর ডিগ্রী কলেজে। অর্থের এত বড় ভার হয়তো বইতে পারবেনা প্রিয়ন্তীর পরিবার।
প্রিয়ন্তীর প্রতিবেশী ও তার শিক্ষকরা বলছেন অর্থের অভাবে যেন প্রিয়ন্তীর এই মেধা ঝরে না যায়। সেদিকে আমাদের সকলের খেয়াল রাখা উচিত। তার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
ছোট্ট এই শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বলেন, আমি বহুদিন খেয়ে না খেয়ে, গাড়ির ভাড়া না থাকায় পায়ে হেঁটে স্কুলে গিয়েছি। বসবাস করি স্কুলের এক টুকরো জায়গায়। আমাদের জমা জমি নাই। এমনকি থাকার জায়গাটাও নাই। সামনে আমার কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে, ভর্তি হওয়ার পর আবার আমাকে অনেকগুলো বইপত্র কিনতে হবে। পাস করেছি মনের ভিতর অনেক আনন্দ অথচ ভবিষ্যতে চিন্তা করলে এই আনন্দ যেন ভেস্তে যেতে বসেছে। আমি চাই বড় হয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবো।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, প্রিয়ন্তীকে জিপিএ-৫ পাওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাই। তার পড়ালেখার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যেকোনো সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।