রাবি রেজিস্ট্রারের বাসায় ককটেল হামলা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসায় ককটেল হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্যারের প্রথম পরিচয় তিনি একজন শিক্ষক হলেও, আমাদের কাছে তিনি একজন সংগ্রামী সহযোদ্ধা। তিনি শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নন, তিনি রাজপথে থাকা একজন সত্যিকারের বিপ্লবী। তাঁর মতো শিক্ষকরা যুগে যুগে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে প্রেরণা দিয়েছেন। যারা এমন একজন ব্যক্তির বাসায় হামলা চালাতে পারে, তারা যে কতটা কাপুরুষ, তা এ ঘটনা প্রমাণ করে।
তিনি আরও বলেন, যদি এমন হামলার পেছনে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র থাকে, তাহলে আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই—এই দেশের জনগণ যেমন একসময় স্বৈরশাসককে বিতাড়িত করেছে, তেমনি এই ষড়যন্ত্রীদেরও প্রতিহত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আধিপত্যবাদের রাজনীতি আর চলতে দেওয়া হবে না। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে, না হলে ছাত্রসমাজ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
সমাবেশে আরেক সাবেক সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মিশু বলেন, মাসউদ স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি একজন আদর্শবান মানুষ এবং আমাদের জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির সৈনিক। তাঁর বাসায় এবং পরিবারকে লক্ষ্য করে এই হামলা খুবই দুঃখজনক ও গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এমন হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ। রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা সন্ত্রাসী।
তিনি বলেন, আজ মাসউদ স্যারের বাসায় হামলা হয়েছে, কাল হয়তো অন্য কেউ টার্গেট হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যারা ইতিহাস তৈরি করেছেন, তাঁদের আমরা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের 'জুলাই চেতনা'কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেই চেতনায় আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাব। যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ আবার জেগেছিল, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একসঙ্গে লড়তে হবে।
সমাবেশে একাত্মতা জানিয়ে রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। হামলার উদ্দেশ্য একটাই—রুয়া ও রাকসু নির্বাচনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করা। একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে যাতে করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা যায় এবং দোষারোপের সুযোগ তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিতে চাই—এই দেশে আগের যুগের অপসংস্কৃতি আর চলবে না। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের যে লড়াই শুরু করেছি, তা কোনো অবস্থাতেই থেমে যাবে না। প্রয়োজনে আমরা রক্ত দেব, তবুও নির্বাচনের দাবি থেকে সরে আসব না।
সমাবেশে রাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসায় চার থেকে পাঁচটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তাঁর পরিবার চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
