পাঁচ দশক ধরে আড়ালে থাকা মেজর ডালিম অবশেষে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইউটিউবের লাইভে আসেন চলতি সপ্তাহের শুরুতে। প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মেজর ডালিম। মুহূর্তে তোলপাড় সৃষ্টিকারী অনুষ্ঠানটির পরই তাকে নিয়ে নতুন করে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। দীর্ঘ সময় পর মেজর ডালিমকে দেখে অবাক হন অনেকে। কারণ তিনি জীবিত আছেন কিনা সেটি নিয়েও ধূম্রজাল ছিল। লাইভ অনুষ্ঠানের পর সেই সন্দেহ কেটে যায়। তবে নতুনভাবে অনেকের মাঝে কৌতূহল জাগে, তবে মেজর ডালিম এখন কোথায় আছেন, কোন দেশ থেকে তিনি এই লাইভ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
২০২১ সালের ১৫ আগস্টের ঠিক আগে পুলিশ সদরদপ্তরের বরাতে বাংলাদেশি একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মেজর ডালিম পাকিস্তান কিংবা লিবিয়ার অবস্থান করছেন। এর আগে, ২০০৯ সালে কূটনেতিক ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে আরেকটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মেজর ডালিম পাকিস্তানে বসবাস করেন। তবে তিনি প্রায়ই লিবিয়ায় যাতায়াত করেন। বিশেষ করে দেশটির রাজধানী বেনগাজিতে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে তার। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের মেয়াদকালে (২০০১ সাল-২০০৬ সাল) মেজর ডালিম একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।
একই সময় ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) বরাবরের মতোই জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি হত্যাকারীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে সম্ভব্য দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। দেশ ছাড়া পাঁচ জনের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরীর কানাডা রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের ফেরানোর চেষ্টা চললেও কোনো অগ্রগতি নেই। মোসলেম উদ্দিন সম্প্রতি ভারতে ধরা পড়েছেন বলে সেদেশের গণমাধ্যমে খবর বের হলেও তার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি বাংলাদেশের তখনকার শেখ হাসিনার সরকার। রশীদ ও ডালিম কোথায় আছেন, তার খোঁজ পাননি বাংলাদেশি গোয়েন্দারা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে স্বপরিবারে নিহত হন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন ভোরের ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তা মেজর ডালিম। যদিও পরবর্তী সরকারের সময় তিনি লেফটেনেন্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে তিনি মেজর ডালিম হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। এর মূল এজেন্ডা ছিল ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন এবং দেশ ছেড়েছেন, তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তি করা। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সেই টাস্কফোর্সের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালি-উর-রেহমান।
সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমকে ওই সময় বলেন, মেজর ডালিমের কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ব্যবসা আছে। এছাড়া মেজর ডালিম কেনিয়ার নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে দেশটির পাসপোর্ট সংগ্রহ করতেও সমর্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।