আজ- সোমবার | ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৩১
২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিরায়ত বাংলা হাজার বছরের ঐতিহাস ঐতিহ্যকে লালন করছে আপন গরজে। প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাসে বাংলার ¯’ান সবার আগে। আর এই বাংলা কালে কালে যুগে যুগে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য আউল বাউল, মরমী কবি ও সুফিসাধক। লালন উত্তর যেকজন সুফিবাদী তাত্বিকের সন্ধান মেলে তাদের মধ্যে হাছনরাজার নাম সবার আগে। মরমী কবি হাছনরাজার তার মরমী সাধনার জন্য বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বাঙলা ভাষাভাষিদের কাছে সুপরিচিত। এমনকি ১৯২৫ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারত সভার অধিবেশনে কলকাতায় এবং পরর্বধসঢ়;ীতে ১৯৩৩ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারেও তিনি হাছনরাজার কথা উল্লেখ করেছেন।

মরমী সাধনার বৈশিষ্ট্যই হ”েছ জাতধর্ম আর ভেদবুদ্ধির উপরে উঠে সকল ধর্মের নির্যাস, সকল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যই আধ্যাতœ-উপলব্ধির ভেতর দিয়ে সাধক আপন করে নেন। তার অনুভবে ধর্মের এক অভিন্ন রূপ ধরা পড়ে। কবি, লেখক-গায়ক,
সাহিত্যিক তাদের মধ্যে আবার কেউ এই সবকিছুকে ছাপিয়ে করেছেন মরমী ভাব-ধারার সাধন। এমন ভাবধারায় যেকজন রয়েছেন তাদের মধ্যে লালন সাই, হাছনরাজা, রাধারমণ, শিতালং শাহ, দূবীণ শাহ, আরকুম শাহসহ অগলিত মরমী ও
সুফিসাধক। তবে লালন উত্তর যেকজন সুফিবাদী তাত্বিকের সন্ধান মেলে তার মধ্যে হাছনরাজার নাম সবার আগে।মরমী কবি হাছনরাজার মরমী গান শুনেননি এমন মানুষ বাংলাদেশে বিরল।

১৮৫৪ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষে লক্ষণশ্রী পরগনা বর্তমান (সুনামগঞ্জের শহরের তেঘরিয়া এলকায়) বাবা আলীরাজা এবং মাতা হুরমত জাহানের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন জমিদার হাছনরাজা। মরমী কবি হাছন্ধসঢ়; রাজার পুরো নাম দেওয়ান
হাছনরাজা চৌধুরী।

মরমী কবি হাছনরাজা ছিলেন জমিদার। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ভারতের করিমগঞ্জের প্রায় ৫লক্ষ একর জমির মালিক ছিলেন। এতো বড় ও বিশাল এলাকার জমিদার হয়েও তিনি অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তার প্রায়
প্রতিটি গানেরই তার প্রমাণ পাওয়া যায়- বালা কইরা ঘর বানাইয়া কয়দিন থাকমু আর আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার/ লোকে বলে বলে রে ঘরবাড়ি বালা নায় আমার।

হাছনরাজা ছিলেন স্বশিক্ষিত।চারপাশের প্রকৃতি থেকেই তিনি শিক্ষা গ্রহন করেছেন। যে শিক্ষা তাকে মানবধর্ম, জাত ধর্মের ভেদবুদ্ধি উপরে উঠে মানবিক

ধর্মীয় চেতনার এক লোকায়ত ঐক্যসূত্র রচনা করে। হাসন রাজার সঙ্গীত, সাধনা ও দর্শনে এই চেতনার প্রতিফলন আছে। তার উপলব্ধি তিনি লিখে গেছেন- উড়িয়া যাইব শুয়া পঙ্কি, পড়িয়া রইব কায়া, কিসের দেশ কিসের খেস, কিসের মায়া দয়ারে
মাটিরও পিঞ্জিরারা মাঝে বন্দি হইয়া রে কান্দে হাছনরাজার মন মনিয়ারে অনেকের মতে প্রথম যৌবনে দেওয়ান হাছনরাজা ভোগ বিলাসী এবং সৌখিন জীবন যাপন করলেও পরবর্তিতে হাছনরাজার জীবন দশন চিন্তা চেতনায় আমুল পরিবর্তন আসে। তিনি তার জিবৎদশায় এবং মৃত্যুর আগ পযন্ত সবকিছুতেই স্রস্টার সানিধ্য কিভাবে লাভ করা যায় তারই সন্ধান করে গেছেন। তাই তো তার সব লিখায় বারে বারে উঠে এসেছে স্রস্ট্রার দশন–যখনি মরিয়া যাইবা মাটি হইবো বাসা, তখনি কোথায় রইবো রঙ্গের রামপাশা, হাড় খাইবো হাড়ুয়া পোকে, মাড়ইল খাইবো ঘুনে,পুণ্য পš’া না চিনিলায় যৌবনের গুমানে, না রইব ঘরবাড়ি না রইব
সংসার, না রইব লক্ষণশ্রী নাম পরগনার, কান্দিয়া হাছন বলে আল্লা কর সার, কি ভাবিয়া নাচ হাছন শূন্যের মাঝার

মরমী সাধক হাছন রাজার চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় তার গানে। তিনি কত গান রচনা করেছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও ্#৩৯;হাছন উদাস্#৩৯; গ্রšে’ তার ২০৬ টি গান সংকলিত হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু গান ্#৩৯;হাছন রাজার
তিনপুরুষ্#৩৯; এবং ্#৩৯;আল ইসলাহ্ধসঢ়;্#৩৯; সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার অনেক গান এখনো সিলেট-সুনামগঞ্জের লোকের মুখে মুখে আছে, কালের নিয়মে বেশ কিছু গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পদ্যছন্দে রচিত হাছনের অপর গ্রš’ ্#৩৯;সৌখিন বার্হা#৩৯;- ্#৩৯;হাছন বার্হা#৩৯; নামে তার আর একটি গ্রš’ রয়েছে। এছাড়া হাছন রাজার বেশ কিছু হিন্দী গানও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার মধ্যে পেয়ারা রে বালা বাজে বাশুরিয়া রে, এ কেসে লোগ হে, কাদার মোরী জানে না।

আজ মরমী কবি হাছনরাজার ১৭০ তম জন্ম বার্ষিকী। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশ করবেন সুনামগঞ্জের সুনামধন্য শিল্পী এবং
বাউল শিল্পীরা। এছাড়াও প্রতিবছর হাছনরাজার জন্ম দিবসকে সামনে রেখে হাছনরাজা ট্রাস্ট জেলা ব্যাপী সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতা এবং দেশের খ্যাতিমান সংগীত শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করে থাকে।

সুনামগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল জানান, মরমী কবি হাছন রাজার জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে যথাযথ সম্মানের সাথে পালন করতে প্রতি বছর উদ্যোগ নেয়া হয়। এবছরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ

জেলা শিল্পকলাতে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাউল এবং ¯’ানীয় শিল্পীরা হান পরিবেশন করবেন। হাসনরাজা ট্রাস্টের সভাপতি দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী বলেন, হাসনরাজার ১৭০তম জন্মদিন যথাযথ ভাবে পালন করেত গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও জেলা ব্যাপী হাসনরাজার গান, গানের সাথে নৃত্য, ও তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে সাংস্কৃতিক
প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এই আয়োজনে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কয়েক শত প্রতিযোগী অংশ গ্রহন করে। পরে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নিয়ে বড় পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা
হয়। এবছরও আমরা আরো বড় পরিসরে এটি আয়োজন করতে যা”িছ। তবে ডিসেম্বরে পরিবর্তে এবছর আমরা জানুয়ারীতে প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবো কারণ ডিসেম্বরে পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা ছুটিতে চলে যায়। এই আয়োজনে যাতে সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারে তাই আমরা জানুয়ারীতে অনুষ্ঠান করবো।

মরমী কবি হাসনরাজা ১৮৫৪ সালে ২১ডিসেম্বর জন্ম গ্রহন করেন এবং ১৯২২সালের ৬ডিসেম্বর ৬৮বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।

সর্বশেষ খবর

ভিডিও সংবাদ