“সংবিধান সংস্কারের পর কোনো অধিকার আদায়ে আর সংগ্রাম করতে হবে না” বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার এম. মঈন আলম ফিরোজী। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের আয়োজনে ‘নতুন বাংলাদেশে কেমন সংবিধান চাই-ঝালকাঠিবাসীর ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি প্রধান আলোচক হিসেবে এমন মন্তব্য করেন।
স্বাগত বক্তব্য প্রদানের পাশাপাশি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আককাস সিকদার। শুরুতেই তিনি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রস্তাব করেন। এরপরে সংবিধান সংস্কারে একে একে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বিভিন্ন প্রস্তাব রাখেন।
ক্ষমতার একই মেয়াদে মধ্যবর্তী নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রাদেশিক সরকার, আনুপাতিক হারে আসন বন্টন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপন, সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ সংযোজন, শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম যুক্তকরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা, ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা, ২৬ অনুচ্ছেদের প্রয়োগ, ন্যায়পাল কার্যকর, নারীর সমান প্রতিনিধিত্ব ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নানান প্রস্তাব করেন উপস্থিত সকলে।
প্রধান আলোচক ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার এম. মঈন আলম ফিরোজী বলেন, অনলাইনে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার প্রস্তাব জমা পড়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে সংস্কারের কাজ শেষ করা সম্ভব না। ৭২ এর সংবিধান আসলে সুন্দর না। সেখানে অধ্যায়ের বিন্যাস থেকে ভাষা ব্যবহারে কলোনিয়ালিজম বা কলোনিয়াল লেগেসি স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানে গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও নির্বাহী বিভাগ দ্বারা শাসনব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে প্রতিটি স্তরে। প্রতিটি শব্দের ব্যাখ্যা থাকা উচিত। প্রথম মৌলিক ৩টি অধ্যায়ের পরেই শব্দের ব্যখ্যা ও সামগ্রিক বিন্যাসে শুধু শাসনব্যবস্থা। এগুলো সূক্ষ্মভাবে ভাবার বিষয়। সব প্রস্তাব নিয়ে এমনভাবে সংবিধান সংস্কার করা হবে যাতে কোনো অধিকার আদায়ে আর সংগ্রাম করতে না হয়।
তিনি আরও বলেন, কোনো প্রক্রিয়ায় এখন একাউন্টেবিলিটি নাই, বিচারক বা পুলিশ নিয়োগ দেয় সরকার। এমপিদের ইন্টারফেয়ারের সুযোগ বন্ধ করতে হবে। গত ৫২ বছরে ন্যায়পাল নিয়ে একবারই আলোচনা হয়েছে। সংবিধানের প্রথম দুইপাতার ধর্ম ও নিরেপক্ষতা বিষয়ে ৫২ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছেই। তৃতীয় পাতা থেকে শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি। সব প্রস্তাব আর্কাইভ করে রাখার প্রক্রিয়া চলছে। ভবিষ্যতে কোনো সংশোধনের আগে যেন এই প্রস্তাবগুলো দেখা যায়।
আসরের নামাজের আগে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী খলিলুর রহমান ও নামাজের বিরতির পরে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহসভাপতি আল-আমীন তালুকদার। রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, জাসদ (রব) ও সিপিবিসহ ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।