হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বলেছেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যদি কেউ ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্ত করে, সেই ষড়যন্ত্রের আমরা মূলোৎপাটন করব। আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হয়ে থাকবে। সবশেষে বলতে চাই, আসুন, আমরা মিলে-মিশে শান্তি, সম্প্রীতি এবং উন্নতির পথে এগিয়ে যাই।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বাদ জুমা বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন ইসকন কর্তৃক মসজিদ ও আদালতের স্থাপনা ভাঙচুর এবং বিচারালয় প্রাঙ্গণে শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যাসহ র’-এর ইশারায় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, মুসলমানরা ৮০০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করেছে। যদি আমরা সে সময় হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চালাতাম, তাহলে আজ ভারতবর্ষে একজন হিন্দুকেও খুঁজে পাওয়া যেত না। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, সেই শাসনকালেও হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল। বর্তমানে, আমার দেশের ফ্যাসিবাদী সরকার যখন হিন্দুস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করছে, তখনই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মিথ্যা নাটক তৈরি করে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার হিন্দু ভাইদের বলতে চাই, আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো সংগঠনগুলো কাজ করছে। কিন্তু আমরা, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা, সর্বদা আপনাদের পাশে থেকেছি। এমনকি আপনাদের মন্দির রক্ষার জন্য পাহারা দিয়েছি। সম্প্রতি দুর্গাপূজা উদযাপন হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে, শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে দুর্গাপূজা পালন করতে পারেন- তা নিশ্চিত করেছি। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে অনেক জায়গায় হিন্দুরা পূজা পালন করতে পারেননি। আমরা আপনাদের নাগরিক ভাই হিসেবে মনে করি এবং বাংলাদেশে আপনাদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনাদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতির মতো উচ্চপদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাতে আমরা কোনো আপত্তি করিনি।
ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, সর্বপ্রথম আমি বাংলাদেশের মাটিতে হিন্দুত্ববাদের নৃশংস আক্রমণে শাহাদাত বরণকারী চট্টগ্রামের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, তরুণ আইনজীবী শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের শাহাদাতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার ছোট্ট কচি শিশুসহ তার শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
তিনি আরও বলেন, আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের ব্যথাটুকু জাতির সামনে, মানুষের বিবেকের সামনে উপস্থাপন করার জন্য এখানে সমবেত হয়েছি। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এটা আমাদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না যে, আজকে সুপরিকল্পিত একটি সাম্প্রদায়িক উসকানির মাধ্যমে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুধু বর্বর নয়, বরং একটি ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড। চট্রগ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে আদালত চত্বরে সন্ত্রাসী সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সরকারি একজন তরুণ আইনজীবী কর্মকর্তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে হত্যা করবে এ রকম বর্বরতার দৃশ্য দেখার জন্য বাংলাদেশ মোটেও প্রস্তুত নয়।
মামুনুল হক বলেন, আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, মানুষের এই ক্ষোভ, মানুষের হৃদয়ের এই রক্তক্ষরণকে আপনারা বুঝার চেষ্টা করুন। যেসব হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরই শুধু বিচারের আওতায় আনলে চলবে না। এক্ষেত্রে আমাদের স্পষ্ট দাবি হলো, এ ঘটনার নেপথ্যে যারা রয়েছে, সেই নেপথ্যের খুনিদের বের করে তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। শহীদ আলিফের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইসকনের স্পষ্ট মদদদাতা খুনি হাসিনাকে আসামি করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
তা ছাড়া তিনি বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছর দেখেছি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ প্রতিটি বিষয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জিত অসৌজন্যমূলকভাবে চরম নগ্ন হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে কীভাবে আহত ও ক্ষতবিক্ষত করে তুলেছে ভারত। আমরা ভারত রাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতির তীব্র সমালোচনা করছি। ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, বাংলাদেশের ব্যাপারে আপনারা নীতি পরিবর্তন করুন। অন্যথায় গোটা বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষ রাজপথে নেমে আসবে এবং ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা বলতে চাই, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কার তৎপরতায় এসব করছে, তা দিবালকের ন্যায় স্পষ্ট। সে ভিন্ন দেশের গুপ্তচর হিসেবে ভূমিকা পালন করছিল। বারবার সে তার প্রভুর দেশে গিয়ে সেখান থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে বাংলাদেশে এসে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চালিয়েছে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ভারতের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে এবং আওয়ামী লীগের প্রযোজনায় ইসকন তৈরি করা হয়েছে। এই ইসকনকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে, বাংলাদেশ কখনো তোমাদের সন্তানদের কাছে মাথা নত করবে না। একইসঙ্গে ইসকনসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের সব যড়যন্ত্র থেকে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ইসকন কোনো হিন্দু সংগঠন নয়, তারা একটি জঙ্গি সংগঠন। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পতিত সরকারের হয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া ভারত এই দেশকে বিপথগামী করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেটা কখনোই সফল হতে দেওয়া যাবে না।
এ সময় মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, মুফতি জাবের কাসেমী, মাওলানা লোকমন মাজহারী, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মুফতি কামাল উদ্দীন, মাওলানা ফয়সাল আহমাদ, মাওলানা আফসার মাহমুদ, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান, মাওলানা মামুনুর রশীদ প্রমুখ।