২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের টাইগাররা বিশ্বকে নিজেদের সামর্থ্য জানান দেয়। এই জয়ের নেতৃত্বে ছিলেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম ও মুশফিক। পরের বছর দেশের ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অভিষেক ঘটে। ২০০৮ সাল থেকে এই পাঁচজন একসঙ্গে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে তারা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় হয়ে ওঠেন দেশের সেরা ক্রিকেটার। ক্রিকেটবিশ্বে তারা পরিচিত হন ‘পঞ্চপাণ্ডব’ নামে।
তবে মাশরাফি ক্রিকেটের সাথে নেই ২০২০ সাল থেকে। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ক্রিকেটের কোনো না কোনো সংস্করণ থেকে অবসর নিয়েছেন। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই তারা সবাই ক্রিকেট হতে নিবেন পুরোপুরি অবসর।
আর তাই পঞ্চপাণ্ডবদের কীর্তি ধরে রাখার অভিনব এক ধারণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক হান্নান সরকার। ফেসবুকে ৫ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওর ক্যাপশনে হান্নান লিখেছেন, ‘সাকিব-তামিমদের নিয়ে এই কথাগুলো কাউকে বলিনি এতদিন। আজকে সবার সামনে আনলাম। দেখুন, শুনুন’। ‘আমার একটা ইচ্ছা যে এমনটা করা যায় কি না। এটা আসলে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন, বোর্ডের সঙ্গে রয়েছেন, সবাই মিলে চিন্তা করতে পারি, এটা আমার ব্যক্তিগতভাবে নিজের জায়গা থেকে চিন্তা করা। এই পাঁচজনের জার্সি নম্বরটা তাঁদের অর্জনকে মূল্যায়ন করে আলাদাভাবে রেখে দিতে পারি। এই জার্সি নম্বরগুলো হয়তোবা বাংলাদেশের নতুন কোনো ক্রিকেটারকে না দিয়ে তুলে রেখে দিলাম।’
দলীয় অর্জন না থাকলেও সাকিব-তামিমদের যে অসংখ্য ব্যক্তিগত রেকর্ড, সেগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করে বিসিবি নির্বাচক বলেন, ‘আমরা যদি দেখি মিডিয়া বা সবার মধ্যে একটা হাইপ আপনাদের মাধ্যমে জানা যে ‘পঞ্চপাণ্ডব’। এই পঞ্চপাণ্ডব শব্দটা কিন্তু সামাজিকমাধ্যমে সবার কাছে পরিচিত। এই পাঁচজনকে উল্লেখ করেই কিন্তু আলোচনাটা এখানে চলে আসে। এই পাঁচজনকে নিয়ে আলোচনা করলে একটা কথাও কিন্তু চলে আসে এবং সেটা হলো এদের অর্জন কী। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে আইসিসি ইভেন্ট বা বড় কোনো ট্রফি হয়তো পাইনি। ব্যক্তিগতভাবে সবার অনেক অর্জন রয়েছে। এটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করি। (সাকিব) আমাদের বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সবার মধ্যে ছিল। তামিম, রিয়াদ কত রান করেছে, সেগুলো আর নতুন করে বলার কিছু নেই।’
তরুণদের আইকন তারা, হান্নান বলেন, ‘এই (তরুণ) খেলোয়াড়দের অনেকেই সাকিব-তামিম-মাশরাফি-মুশফিক-রি য়াদকে দেখে বড় হয়েছে। তাদের আদর্শ হিসেবে চিন্তা করেই বড় হয়েছে। এই চিন্তা থেকে কখনো হয়তো অনেকের স্বপ্ন জেগেছে, আমি যখন সাকিব ভাইয়ের মতো ক্রিকেটার হব, তখন তার (সাকিব) ৭৫ নম্বর জার্সি পরে খেলব। মাশরাফির মতো হলে ২ নম্বর পরে খেলব। তামিম হলে ২৮, মাহমুদউল্লাহ হলে বা আমাদের যে খেলোয়াড়েরা এই পাঁচজনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছি, তাদের আদর্শ মেনেই বড় হয়েছে অথবা তাদের জার্সি নাম্বার গায়ে জড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছে।’
এই পঞ্চপাণ্ডবদের জার্সি নম্বর ভবিষ্যতে আর কাউকে না দেওয়ার প্রস্তাবটি নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করবে। হান্নান সরকারের এই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে বিসিবি এই প্রস্তাব নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই এখন দেখার পালা।