আজ- মঙ্গলবার | ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:২৩
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইন বিষয়ে পড়াশোনা নিয়ে ৫ ভুল ধারণা

আইন নিয়ে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ যেমন চোখে পড়ে, তেমনই অনেকেরই আছে বিষয়টি নিয়ে বা আইনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা ভুল ধারণা।

১. তর্কপ্রিয় না হলে আইন পড়ে লাভ নেই
আইনের শিক্ষার্থীমাত্রই তর্কপ্রিয়—এ ধারণা বহুল প্রচলিত। এর সত্যতা অনেকাংশে নির্ভর করে ‘তর্ক’ শব্দটির ব্যাখ্যার ওপর। তর্ক যদি শুধু তর্কের খাতিরেই হয়, তাহলে এর সঙ্গে আইনবিষয়ক পড়ালেখার কোনো যোগসূত্র নেই। তবে যুক্তি যে তর্কের চালিকা শক্তি, সেই তর্কে পারদর্শী হয়ে ওঠাই আইনের শিক্ষার্থীদের চাওয়া। আইনের সঠিক অর্থ বুঝে বাস্তবতার আলোকে তা যথাযথ প্রয়োগের সক্ষমতাই আইনের শিক্ষার্থীদের যুক্তিতর্কের চালিকা শক্তি। এই গুণ আয়ত্ত করার জন্য প্রয়োজন তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, মেধা ও অধ্যবসায়ের মেলবন্ধন। ধৈর্যসহকারে কারও কথা শোনা ও অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তাও এ ক্ষেত্রে জরুরি। নিজের যুক্তি সঠিকভাবে তুলে ধরার মতো দক্ষতা এই পেশায় সহযোগী হতে পারে, কিন্তু তা একমাত্র অবলম্বন নয়। তাই তর্কপ্রিয় না হলে আইনে পড়ে লাভ নেই, এ ধারণা ঠিক নয়।
মাকসুদা সরকার, সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস

২. আইন মানেই মুখস্থ পড়াশোনা
আইনের শিক্ষার্থীদের সব আইন মুখস্থ করতে হয়—এমনটাও ভাবেন অনেকে। বাস্তবতা হলো, আইন মুখস্থ করার বিষয় নয়; বরং কীভাবে চিন্তা করতে হয়, তা শেখার বিষয়। প্রতিদিন নিত্যনতুন আইন, বিধিমালা, নীতিমালা, প্রজ্ঞাপন ও আদালতের রায় এসে আইনের এক মহাসমুদ্র তৈরি করছে। এই বিশাল আর পরিবর্তনশীল জ্ঞান মুখস্থ করার প্রচেষ্টা অনেকটা সমুদ্রকে বোতলে বন্দী করার চেষ্টার মতো। আইন শিক্ষা মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের আইনের তত্ত্ব ও নীতির গভীরে প্রবেশ করতে শেখায়। তাঁরা শেখেন কীভাবে আইন বিশ্লেষণ ও প্রয়োগ করতে হয়। একজন দক্ষ আইনজীবী শুধু তাঁর স্মৃতিশক্তির ওপর নির্ভর করেন না; বরং গভীর অনুধাবন ও সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি দিয়ে আইনের জটিল ও সূক্ষ্ম দিকগুলো বোঝার সক্ষমতা অর্জন করেন।
মো. জাহিদ-আল-মামুন, প্রভাষক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩. আইন পড়া মানেই শুধু আদালতে কাজ করা
আইনের ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের মধ্যে যেসব ভুল ধারণা কাজ করে, তার মধ্যে অন্যতম—আইন পড়ে শুধু আদালতে কাজ করতে হয়। বাস্তবতা হলো, আইনে পড়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ থাকে। শুধুই আইনের শিক্ষার্থীদের জন্যই রয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের অধীন সহকারী জজ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ‘প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা’ হওয়ার সুযোগ। তা ছাড়া বিসিএসসহ বাংলাদেশের সব সরকারি চাকরির সুযোগও আছে। দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষকের ব্যাপক চাহিদা আছে। আছে কমিশন্ড অফিসার পদমর্যাদায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে ‘জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল’ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। বিভিন্ন ব্যাংক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও দূতাবাসে ‘ল অফিসার’ হিসেবেও ক্যারিয়ার গড়া যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করা যায়। ইমিগ্রেশন কেস অফিসার বা ল অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন অনেকে। তা ছাড়া মানবাধিকার কিংবা নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে যদি কেউ কাজ করতে চান, তাঁর জন্যও আইন একটা দারুণ বিষয়।
তকি আশরাফ, প্রভাষক, আইন বিভাগ স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

৪. ব্যারিস্টার কারা
বার অ্যাট ল একটি বিদেশি ডিগ্রি, যা অর্জন করে ইংল্যান্ডে কোর্ট প্র্যাকটিসের সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু সেই একই ডিগ্রিধারী ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করতে চান, তাকেও বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ল কলেজ থেকে আইন ডিগ্রিধারীদের মতো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অ্যাডভোকেটশিপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হয়। বার অ্যাট ল ডিগ্রিধারীরা বাংলাদেশে সরাসরি প্র্যাকটিস করতে পারবেন—এ ধারণা ঠিক নয়। ব্রিটিশ ল নিয়ে পড়াশোনা করেন বলে ব্যারিস্টারদের আলাদাভাবে বাংলাদেশি আইনগুলো জেনে নিতে হয়। বিভিন্ন কারণেই তাঁদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও তার্কিক দক্ষতা বেশ ভালো হয়ে থাকে। চুক্তি আইন, কোম্পানি আইন, করপোরেট বিষয়াবলি কিংবা ইন-হাউস ল-ইয়ার হিসেবেও তারা বেশ দক্ষ। কিন্তু দিন শেষে যিনি কোনো আইন ভালোভাবে জানবেন, বুঝবেন ও প্রয়োগ করতে পারবেন, তিনিই একজন দক্ষ আইনজীবী হয়ে উঠতে পারবেন।
আলী মাশরাফ, প্রভাষক, আইন বিভাগ, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

৫. আইন পেশায় নারীদের সুযোগ কম
আইন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বা সুযোগ কম—এ ধারণাও ভুল। আইন শুধু নারীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। আইন পেশায় কাজের সময়সূচিও অন্যান্য অনেক চাকরির তুলনায় নমনীয়, যা নারীদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করে। নারী বিচারক ও আইনজীবীরা আমাদের আদালতগুলোয় নিয়মিত কাজ করছেন, দক্ষতা ও যুক্তি দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জোরালো ভূমিকা রাখছেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করছেন।
নাজিফা মুনিয়াত কাদের, প্রভাষক, আইন বিভাগ, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর

ভিডিও সংবাদ

Play Video

এইরকম আরো খবর