হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর নির্বাচিত কমিটি বাতিল হওয়ায় আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে হাবের বাতিল হওয়া কমিটির নেতারা এ আশঙ্কার কথা জানান। সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে তারা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আগামী হজের প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাবের বাতিল হওয়া কমিটির সাবেক মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার এ শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীরা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যমান। গুটিকয়েক হজ এজেন্সির মালিক তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী ছিলেন, হাবের মতো একটি স্পর্শকাতর জায়গা যেখানে ৯৫ শতাংশ হজযাত্রী বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হজ পালন করে থাকেন, হাব এই বিশাল সংখ্যক হজযাত্রী সমন্বয় করে থাকে, সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হাবে প্রশাসক বসানোর মতো একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সদস্যরা মনে করেন।’
ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘আমরা মনে করি, হাবের কমিটির অবর্তমানে, হাব ও হজ এজেন্সির মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেবে। হাবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবে যে সেবাগুলো হজযাত্রীদের দেওয়া হয়, সেখানে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। ২০২৫ সালের হজে আমরা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছি।’
গত ১৫ অক্টোবর হাবের কমিটি বাতিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে যুগ্মসচিব মোহাম্মদ দাউদুল ইসলামকে হাবের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে।
সুবিধা কমিয়ে হজের খরচ কমানো হজযাত্রীদের বিভ্রান্ত করেছে
হাবের সাবেক মহাসচিব বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে এ বছর হজের খরচ কমেনি। গত বছরের তুলনায় এবার হজের খরচ বেড়েছে। হজে খরচ মূলত কমানো সম্ভব দুটি জায়গায়- একটি বিমানভাড়া, আরেকটি সৌদি অংশের খরচ। দুটি জায়গার মধ্যে এবার বিমানভাড়া ২৭ হাজার টাকা কমেছে। কিন্তু টাকার বিপরীতে রিয়ালের বিনিময় মূল্যের তারতম্যের কারণে এবার প্রত্যেক হজযাত্রীর খরচ বেড়েছে ৪০ হাজার টাকা। এভাবে ধরলে গত বছরের তুলনায় এবার হজের খরচ ১৩ হাজার টাকা বেড়েছে।’
‘কিন্তু, এবার হজের খরচ এক লাখ নয় হাজার টাকা কমেছে বলা হচ্ছে সেটা কীভাবে? এবার ধর্ম মন্ত্রণালয় সেবার মান কমিয়ে হজ প্যাকেজ মূল্য কম দেখানোর চেষ্টা করেছে। এটি হজযাত্রীদের বিভ্রান্ত করছে। এছাড়া এবারের প্যাকেজ খাওয়া খরচ ছাড়া ঘোষণা করা হয়েছে।’
হজের বিমানভাড়া দেড় লাখ টাকার নিচে হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ফরিদ আহমেদ মজুমদার আরও বলেন, ‘সরকারি হজ প্যাকেজে মদিনার বিমানভাড়ার ক্ষেত্রে একটি কথা বলা আছে। প্রথম চারদিনের হজ ফ্লাইটে যারা যাবে, তাদের জন্য এই প্যাকেজ। এরপর যারা যাবেন তাদের এক হাজার রিয়াল বা ৩২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ বাড়বে। এর আগে কখনোই ধর্ম মন্ত্রণালয় খাবারের হিসাব বাদ দিয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেনি। এবার প্যাকেজের মূল্য কম দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে। এটি মোটেও যুক্তিসংগত নয় বলে আমরা মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব হজযাত্রী হজে যান তাদের বয়স বেশি থাকে। এবার প্যাকেজ অনুযায়ী হারাম শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বাড়ি হওয়ায় তাদের ভোগান্তি হবে। মিসফালাহ ব্রিজের কাছে তাদের নামিয়ে দেওয়া হবে, তাদের এখান থেকে হারাম শরীফ গিয়ে নামাজ পড়ে বাসে উঠে আবার গন্তব্যে যেতে হবে। এটা অনেক কঠিন বিষয়, আমি মনে করি এটি সাধারণ হজযাত্রীদের জন্য কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
এ সময় হাবের সাবেক কমিটির সভাপতি ফারুক আহমেদ সরদারসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।