‘শ্রাবণের মেঘগুলি জড়ো হলো আকাশে
অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবণে ঝরায়ে…’
হঠাৎ করেই আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। হালকা বজ্রপাতের সাথে কাঁপন ধরানো শীতল মৃদু বাতাস। আর সেই মৃদু বাতাসের আলিঙ্গনে ধরণীর বুকে আকাশ ভেঙে নামে প্রশান্তির বারিধারা, ঠিক যেনো মেজবাহ রহমানের গানের মতোই অঝোরে নামা এক মেঘলা আকাশ বৃষ্টি।
সাড়ে বারো’শ একরের ক্যাম্পাসে মৃদু শীত হানা দিলেও বৃষ্টি এখনো উঁকি দেয় ক্ষণে ক্ষণে। ব্যস্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ বৃষ্টি যেন এনে দেয় এক গভীর নীরবতা। আর সেই নীরবতায় চুপটি মেরে থেকে বৃষ্টির নাচন শুনতে কার না ভালো লাগে! সবুজের চাদরে মোড়ানো প্রকৃতিকন্যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এই বৃষ্টিমুখর দিনগুলো নিয়ে লিখেছেন রিসালাত আলিফ ।
সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাকৃবি ক্যাম্পাস বৃষ্টিতে ধারণ করে এক মোহনীয় অবতারের রূপে। বৃষ্টি ভেজা ক্যাম্পাসের সবুজাভ যেন আরো টেনে নিয়ে যেতে থাকে প্রকৃতির অভ্যন্তরে। জব্বারের মোড় হতে কে আর মার্কেট, কৃষিবিদ চত্বর হতে আমবাগান, পুরো ক্যাম্পাসেই যেন এক সজীবতা ফিরে আসে। ঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যাতায়াত কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কপোত কপোতীর বৃষ্টি বিলাস – সবমিলিয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি।
ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ না থাকলেও হলগুলোতে পড়ে যায় খিচুড়ি ভোজের বিশাল ধুম। ধোঁয়া উঠা খিচুড়ি আর সাথে একটুখানি আচার। আহা! অসাধারণ। আবার রাত নামতেই কয়েকজন শিক্ষার্থীদের দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়াল কিংবা শেষ মোড়ের টঙের উপর ভেজা বেঞ্চিতে বসে চা খেতে।
ক্লাসের ফাঁকে কৃষিবিদ চত্বরে কাঁদা মাখিয়ে ফুটবল, পরীক্ষার চাপে পড়ে বইয়ের ভাঁজে নিজেকে গুটিয়ে রাখা কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট ও প্র্যাকটিক্যালের চাপে পড়ে নিজেকে আত্মসমর্পণ, আবার হলের দু চারটে রুম থেকে কখনো কখনো ভেসেও আসে ফোনে প্রেমিক যুগলের কথোপকথন – এসবও বৃষ্টির দিনগুলিতে বাকৃবি ক্যাম্পাসের প্রতিনিয়ত চিত্র। তবে ক্যাম্পাসে চলমান এতো রং তামাশার মাঝেও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় রুমে শুয়ে দিব্যি আরামের ঘুম ঘুমাতে। বৃষ্টির দিনে কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমটাই যেন তাদের কাছে সবকিছু।
ঝড়-বৃষ্টির এমন দিনগুলোতে কারো কারো হঠাৎ করেই মনটা হয়ে যায় খারাপ, হয়ে যায় উদাসীন, উতলা। আকাশের মন খারাপের সঙ্গে পাল্লা দিতে চায় মন।
‘আজ কেন মন উদাসী হয়ে
দূর অজানায় চায় হারাতে…’
আবেগী চিত্তে বসে কেউ কেউ স্মৃতিচারণ করে সেই স্মৃতিবিজড়িত দিনগুলোর; যা হয়তো কখনও বা ফিরে পাবার নয়।
তবুও এই ঝুম বৃষ্টিতে ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকা আকাশচুম্বী দালান, মরণ সাগর কিংবা শহিদমিনারও মেতে ওঠে বৃষ্টি বিলাসে; বৃষ্টির তালের সাথে চিৎকার করে তারাও যেন বলে উঠে ‘ওহে বাকৃবি, এ বৃষ্টি তোমায় করেছে সবুজে মোড়ানো এক রূপকথার মায়াপুরী।’
রিসালাত আলিফ
শিক্ষার্থী,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।