সালাম দেওয়া সুন্নত। কিন্তু সালামের উত্তর যথাযথভাবে উচ্চারণ করে এবং সালামদাতাকে শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। ইশারায় সালামের উত্তর দিলে এই ওয়াজিব আদায় হয় না। মনে মনে সালামের উত্তর দিলেও এই ওয়াজিব আদায় হয় না। নিম্নস্বরে সালামদাতাকে না শুনিয়ে উত্তর দিলেও এই ওয়াজিব আদায় না।
সালামের জবাবে শুধু হাত বা মাথা দিয়ে ইশারা করার অভ্যাস অনেকের মধ্যে দেখা যায়, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে সালামের উত্তর দিলে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার কারণে গুনাহ হবে।
তবে যদি সালামদাতা বধির হয় অথবা দূরে থাকে যেখানে আওয়াজ পৌঁছবে না, তাহলে মৌখিক জবাবের পাশাপাশি ইশারাও করা যায় যেন সালামদাতা বুঝতে পারে, তার সালামের জওয়াব দেওয়া হয়েছে।
ইসলামে সালাম অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুল (সা.) বেশি বেশি সালাম দিতে উৎসাহিত করে বলেছেন সালাম মুসলমানদের পারস্পরিক সৌহার্দ ও ভালোবাসা বাড়ায়। নবিজি (সা.) বলেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! আপনারা মুমিন না হলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না আর পরস্পরে সৌহার্দ ও ভালোবাসা না রেখে আপনারা মুমিন হতে পারবেন না। আমি আপনাদের এমন কাজের কথা বলছি যা আপনাদের পারস্পরিক সৌহার্দ বৃদ্ধি করবে, নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি সালাম আদান-প্রদান করুন! (সহিহ মুসলিম: ২০৩)
মানুষ সৃষ্টির পরপরই আল্লাহ তাআলা তাকে সালামের সৌজন্য শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষের মধ্যে প্রথম সালাম দিয়েছিলেন প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লহ তাআলা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করলেন। এরপর তাকে বললেন, যাও, ফেরেশতাদের সালাম দাও। উত্তরে তারা তোমাকে কী বলে তা ভালো করে শোনো। এটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের অভিবাদন।
আদম (আ.) ফেলেশতাদের কাছে গিয়ে তাদের সালাম দিলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’ অর্থাৎ আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। উত্তরে ফেরেশতারা বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অর্থাৎ আপনার ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। ফেরেশতারা ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর রহমতও বর্ষিত হোক’ বৃদ্ধি করলেন। (সহিহ বুখারি: ৬২২৭)
সালামে দোয়া বৃদ্ধি করলে আল্লাহ তাআলা সওয়াবও বৃদ্ধি করে দেন। আবু হোরায়রা (সা.) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) বসেছিলেন, এক ব্যক্তি এসে বললো, ‘সালামুন আলাইকুম’ তিনি বললেন, দশ নেকি। দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে বললো, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ তিনি বললেন, বিশ নেকি। তৃতীয় ব্যক্তি এসে বললো, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ত্রিশ নেকি। (সহিহ ইবনে হিব্বান)
তবে এর বেশি বৃদ্ধি করা ঠিক নয়। বিভিন্ন হাদিসে সালামের সবচেয়ে ছোট সংক্ষীপ্ত রূপ ‘আসসালামু আলাইকুম’ এবং সবচেয়ে দীর্ঘ রূপ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ বর্ণিত হয়েছে। অনেকে ‘ওয়া মাগফেরাতুহু’ ‘ওয়া জান্নাতুহু’ ইত্যাদি বৃদ্ধি করেন। এভাবে সালাম দেওয়ার প্রচলন নবিজি (সা.) বা সাহাবিদের মধ্যে ছিল না। তাই এভাবে সালাম বৃদ্ধি করা ঠিক নয়।