আজ- বুধবার | ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৪৫
৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ ভাতৃ দ্বিতীয়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্য

” ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা;
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা “

কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে উদযাপিত হয় শুভ “ভাই ফোঁটা”। এশিয়া মহাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র কালী পূজা ও দীপাবলির পরে ভাতৃ দ্বিতীয়া তিথিতে প্রতি ঘরে ঘরে ভাই ফোঁটার আয়োজন করেন। তবে পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামে পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। আবার মহারাষ্ট্র,গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে ভাইবিজ বলা হয়।

বাংলার ঐতিহ্যে হল এই ভাতৃ দ্বিতীয়া। ভাই ফোঁটা বা ভাতৃ দ্বিতীয়া বাংলার দীর্ঘ ঐতিহ্যের অংশ। এটি বাংলার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব,যা ভাই-বোনের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা,শ্রদ্ধা এবং সুরক্ষার বার্তা বহন করে। প্রতিটি পরিবারেই এই দিনটির একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে,যেখানে পারিবারিক আনন্দ এবং ঐতিহ্য একই সঙ্গে উদযাপিত হয়। ভাতৃ দ্বিতীয়া কেবলমাত্র একটি উৎসব নয়,বরং ভাই-বোনের মাঝে সারা জীবনের জন্য স্থায়ী বন্ধনের অঙ্গীকার। এই বিশেষ দিনে সকল ভাই-বোনকে টাইমস টুডের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

উপহার ও মিষ্টিমুখের আয়োজন:-
ভাতৃ দ্বিতীয়ায় বোনেরা ভাইয়ের জন্য নানা ধরনের মিষ্টান্ন ও খাবার পরিবেশন করেন,আর ভাইয়েরাও তাদের বোনদের হাতে উপহার তুলে দেন। এই দিনটিতে উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে ভাই-বোনের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। বোনেরা যেমন ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করেন,ভাইয়েরাও বোনদের জন্য সুরক্ষা এবং ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দেন।

সাধারণত আশ্বিন বা কার্তিক মাসের শুক্লাপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠান পালিত হয়। অনেকের বাড়িতে প্রতিপদেও ভাইফোঁটা পালন করা হয়। যদিও দ্বিতীয়াতেই এই ফোঁটা দেওয়ার রীতি বেশি৷ ভাইয়ের দীর্ঘায়ুর আশায় এই অনুষ্ঠান হয়। শঙ্খের আওয়াজে ভরে ওঠে বাঙালি সনাতনী গ্রাম,মহল্লা,পাড়া,আবাসন। এই বছর ভাইফোঁটা শুরু হয়েছে (৩ নভেম্বর) ২০২৪৷ দিনটি রবিবার হওয়ায় খুশির আমেজ অনেক বাড়িতেই। ওইদিন প্রদীপের আলোয় মিষ্টি খাওয়ার খুনশুটিতে বাঙালি হিন্দু বাড়িগুলোতে এক অন্য আমেজ থাকে।

ভাইফোঁটা নিয়ে প্রচলিত কাহিনী:-
কথিত রয়েছে,এই বিশেষ তিথিতে যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন। এই উৎসব তাই যমুনা দ্বিতীয়া নামে পরিচিত। আরেকটি মত বলছে, শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর বধ করে এমন দিনে বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন। সেই দিন সুভদ্রা তাঁর কপালে দেন তিলক। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেই এই তিলক দেওয়া হয়।

কোনদিকে বসিয়ে ফোঁটা দিতে হয়:-
ভাইকে সর্বদা উত্তর দিকে বা উত্তর পূর্ব দিকে মুখ করে বসিয়ে ফোঁটা দেওয়ার রীতি রয়েছে। কখনওই ভাইকে মেঝেতে বসিয়ে ফোঁটা দিতে নেই। বোন বা দিদি যিনি ফোঁটা দিচ্ছেন,তাঁর মুখ যেন উত্তর দিকে থাকে।

ভাইফোঁটার ছড়া:-
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা,যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা’। দ্বিতীয়াতে ফোঁটা দিলে এই মন্ত্র। আবার কোনও কোনও বাড়িতে প্রতিপদে ফোঁটা হয়। প্রতিপদে ফোঁটার ছড়ার লাইন,’প্রতিপদে ফোঁটা.. দ্বিতীয়াতে দিয়া নীতা.. আজ হতে ভাই আমার যম দুয়ারে তিতা।’

কখন ফোঁটা না দেওয়া উত্তম:-
ভাইফোঁটা ২০২৪ সালের সেরা মুহূর্ত মূলত;ভোর ৬ টা ৪৫ মিনিটের পর থেকে সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে, আবার বেলা ১১টা থেকে ১১টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে এবং তার পরে দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে। এর মাঝে যে সময় রয়েছে,তাতে ফোঁটা না দেওয়াই ভালো। সন্ধ্যাকালীন ভাইফোঁটা দিতে চাইলে বিকেল ৫টা ৩৪ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সময় শুভ। ভাইফোঁটার সবচেয়ে শুভ মুহূর্ত হল- দুপুর ১টা ৫৪ মিনিট থেকে ২টা ৪৮ মিনিটের মধ্যে।

পঞ্জিকা মতে,কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথি ২ নভেম্বর রাত ০৮ টা ২১ মিনিটে শুরু হবে এবং ৩ নভেম্বর রাত ১০ টা ০৫ মিনিটে শেষ হবে। এমন পরিস্থিতিতে,উদয় তিথি অনুসারে,ভাই ফোঁটা উৎসব পালিত হবে শুধুমাত্র ৩ নভেম্বর রবিবার।

সত্যজিৎ দাস, গণমাধ্যমকর্মী।

সর্বশেষ খবর

ভিডিও সংবাদ

Play Video

এইরকম আরো খবর