বকেয়া মজুরির দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন চা শ্রমিকরা। যত সময় যাচ্ছে আন্দোলন আরও তীব্র হচ্ছে। বাগানে কাজ বন্ধ রেখে রাজপথে নেমে এসেছেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি বাগানের চা শ্রমিকরা।
রোববার শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের (লেবার হাউস) শতাধিক চা শ্রমিক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরে শ্রমিকরা চৌমুহনী চত্বর হয়ে ভানুগাছ রোডের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
বকেয়ার দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে এনটিসির অধীনে থাকা ১২টি বাগানের কার্যক্রম। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও বিষয়টির কোনো সমাধান না হওয়াতে অবশেষে রাজপথে নেমেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ব্যানারে আট সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধ, রেশন ও ১৭ মাস ধরে চা শ্রমিকদের পিএফের অর্থ অফিস ফান্ডে জমা দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে অবস্থান ও ঘেরাও করে রাখেন চা শ্রমিকরা।
এর আগে বকেয়া মজুরির দাবিতে ২০ অক্টোবর থেকে সব বাগানে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। তবে এর পরেও তাদের বকেয়া পরিশোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন জানায়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের (এনটিসি) মালিকানাধীন দেশের সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে অবস্থিত চা বাগানের চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশন, ন্যায্য পাওনা মালিকপক্ষ কর্তৃক আট সপ্তাহ ধরে অপরিশোধিত। ১৭ মাস ধরে চা শ্রমিকদের পিএফ অর্থ পিএফ অফিস ফান্ডে জমা প্রদান না করার কারণে শ্রমিকরা নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। ফাঁড়ি বাগানসহ মোট ১৯টি চা বাগানের স্থায়ী, অস্থায়ী ও পোষ্য শ্রমিক ১৫ সহস্রাধিক। সব বাগান মিলিয়ে যার সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। তাদের সবাই কোনো না কোনো ভোগান্তিতে রয়েছেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন আরও জানায়, হাজার হাজার চা শ্রমিক সদস্যরা অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। চা বাগানগুলোতে বিদ্যমান সমস্যা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালকের সঙ্গে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি, ইউনিয়ন নেতা ও চা শ্রমিকদের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি ও ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা জানান, এনটিসির বাগানের চা শ্রমিকরা আট সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না। কোম্পানির শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কাটার পরেও মালিকপক্ষ সেটাকে মজুত করে রেখেছে, তারা পিএফ অফিসে জমা দেয়নি। এ ছাড়া শ্রমিকদের বাড়িঘর, আবাসনের ব্যবস্থা, পানি ও চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন রকমের সমস্যা রয়েছে। ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯টি চা বাগানে শ্রমিকসংখ্যা ১৫ হাজারের মতো। তাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। বাগান বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনটিসি মালিকানাধীন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সৃষ্ট সমস্যা নিষ্পত্তি এবং চা শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে উত্থাপিত শ্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানান ইউনিয়ন নেতারা। পরে শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন চা শ্রমিক নেতারা।