নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত মোকাররম সর্দারকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী।
রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলীগঞ্জের সর্দরা ভিলায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, যৌথবাহিনীর অভিযানে তাকে আটক করা হয়েছে। তাকে রাতেই ফতুল্লা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি।
গ্রেফতার মোকাররম সর্দার কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার দামপাড়ার মরহুম নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি নিকলী উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান।
সূত্রে জানা গেছে, মোকাররম সর্দারের বাবা নূরুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে ৯০ দশকের দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকায় আসেন। সেখানে তিনি বড় ছেলে মোকাররমকে সাথে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। একসময় শ্রমিক লীগ নেত কাউছার আহম্মেদ পলাশের হাত ধরে লোড-আনলোড শ্রমিক হিসেবে নাম লেখান মোকাররম। এরপর লোড-আনলোডের শ্রমিকদের সর্দার হন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কয়েকটি কোম্পানি জাহাজের মালামাল রেখে চলে যায়। ফতুল্লার প্রভাবশালী শ্রমিক লীগ নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশের সহযোগিতায় চাঁদাবাজিসহ জাহাজের মালামাল লুট করে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হন মোকাররম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জের এসপি হয়ে এলে মোকাররম সর্দার তার আশীর্বাদ লাভ করেন। সেখানে মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে হারুন পাথর ও কয়লার ব্যবসার পাশাপাশি জাহাজের পণ্য চোরাইয়ের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন। এসব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন হারুন। এছাড়া অবৈধ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছ থেকে হারুনের হয়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন মোকাররম সর্দার। এসব অর্থের একটা বড় অংশ রাখা হতো মোকাররম সর্দারের কাছে। হারুনের এসব টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় খাটাতেন মোকাররম। নিজ জেলার কিশোরগঞ্জ সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে নামে-বেনামে অন্তত সাতটি ইটভাটা রয়েছে হারুনের। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় কয়লা সরবরাহের অন্তত শত কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। সম্প্রতি মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে হারুনের ওপর একটি সিনেমা বানানোর প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছিল। সিনেমাটির নাম দেয়া হয়েছিল ‘হাওরের মানিক’। সেখানে পুলিশ অফিসার হারুনকে হাওরের মানিক হিসেবে চিত্রায়িত করার কথা ছিল।
গত ২১ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোকাররকম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ডিবি হারুন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তাকে জিতিয়ে আনেন বলেও অভিযোগ উঠে।