আজ- সোমবার | ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:১৬
২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষিতে সময় ও খরচ বাঁচাবে ড্রোন প্রযুক্তি

এক একর সবজি বা বিষেশায়িত কোন কৃষি পণ্য আবাদে জমিতে বালাইনাশক বা পানি স্প্রে করতে ২৫০-৩০০ পানির প্রয়োজন হয়। এছাড়া সময় লাগে ১-৩ ঘণ্টা। সেখানে পানি স্প্রের কাজটি ড্রোনের মাধ্যমে করলে মাত্র ১৫-২০ লিটার পানির প্রয়োজন হবে। সময় লাগবে মাত্র ১০-১৫ মিনিট। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এ কাজটি করতে পারলে সময়, অর্থ, শ্রম সবই সাশ্রয় হবে। এর কার্যকারিতাও অনেক ভালো। ফলে ড্রোনের মাধ্যমে অল্পসময়ে, অল্প খরচে অনেক বেশি জমিতে কৃষি উপকরণের বিশেষ করে সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করা সম্ভব।

জমি চাষের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, ফসল পর্যবেক্ষণ, আগাছা, কীটপতঙ্গ এবং রোগের হাত থেকে ফসলের সুরক্ষা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষিজ উপকরণগুলির ডেটা সংগ্রহ ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ড্রোন ব্যবহার করছে। উন্নত প্রযুক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত ও ফিলিপাইনে ড্রোনের ব্যবহার বাড়ছে। ভারতে এর আগে ড্রোনের ব্যবহার শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। কৃষকদের ড্রোন কেনার জন্য ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে কৃষকদের ৫০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার করার পর চীনের কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ১৭-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার করে ফসলের খেতের সার্বিক অবস্থার মনিটরিং, বালাইনাশক স্প্রে, সেচসহ অনেক কিছু করা সম্ভব। ড্রোনের সঙ্গে কাস্টমাইজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইন্টিগ্রেট করলে ড্রোন একবার কোনো এলাকার ফসলের খেতের ওপর দিয়ে উড়ে গেলে ওই এলাকার ফসলের সার্বিক অবস্থা জানান দিতে সক্ষম। মাটির আদ্রতা নির্ণয়, বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি যাচাই, জমির পরিমাণ অনুসারে শস্য রোপণও ড্রোনের মাধ্যমে করছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। ড্রোনের মাধ্যমে শস্য আবাদে জায়গার অপচয় কমানো সম্ভব। জমি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের পর বীজ বপনে ড্রোনের ব্যবহার করা সম্ভব। ড্রোনগুলো ৭০ শতাংশের বেশি বীজ নির্ভুল জায়গায় বপণ করতে সক্ষম।

বাংলাদেশে ড্রোন ব্যবহার

কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার করতে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। একটি কর্মশালার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০ জন কর্মকর্তাকে প্রাথমিকভাবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে ড্রোনের ব্যবহার দেশে বাড়াতে হলে শুধু সরকারিভাবে ভূমিকা নিলেই হবে না। এর জন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে আমদানি নীতি সহজ করা প্রয়োজন। ড্রোনের ব্যবহার শুরু করতে আইনি কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

কেননা দেশে এখন কৃষি শ্রমিক সংকট তীব্র হচ্ছে। কৃষকরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। এর ফলে কৃষকের যেমন খরচ বাড়ছে তেমনি সরকারের সার খাতে ভর্তুকি বেশি দিতে হচ্ছে। তাই ড্রোনের ব্যবহারের মাধ্যমে সারের ব্যবহার সঠিক মাত্রায় করতে পারলে খরচ যেমন কমে আসবে তেমনি কৃষকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। সারে ভর্তুকি কমাতে ড্রোনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এছাড়া সামনের দিনে উত্তম কৃষি চর্চা (জিএপি) প্রয়োগ করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোন অন্যতম ভরসার প্রযুক্তি হতে পারে।

এ বিষয়ে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষি পণ্যের উৎপাদনের সঠিক তথ্য পেতে ড্রোনের ব্যবহার করছে। আবার মাঠ পর্যায়ে কোন ফসলের কি অবস্থা সেটি জানতেও এ প্রযুক্তি বেশ সহায়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি নিরূপণ, সরকারি প্রণোদনা, পরিকল্পনাসহ যে কোনো উদ্যোগ নিতে হলে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা ও জরিপ চালাতে এটির ব্যবহার প্রয়োজন।

সরকারিভাবে এ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোয় প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে যারা এ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চায় তাদেরকে সুযোগ করে দেওয়া হবে। আমদানি সহায়ক নীতি গ্রহণ করে এটির ব্যবহার বাড়ানোয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা কৃষককে কোনভাবেই পিছিয়ে রাখতে চাই না।

সর্বশেষ খবর

ভিডিও সংবাদ