আড়াই মাস ধরে প্রায় টানা পতনে শেয়ারবাজারের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসেছে, এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। লোকসানের পরিমাণ এত বেড়েছে যে কিছু লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাবেন, সে চিন্তাও ছেড়ে দিয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আশাবাদী হয়ে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তারাও লোকসানে। কোনোভাবেই দর পতন থামছে না।
শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থা হারিয়েছেন সিংহভাগ বিনিয়োগকারী। ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতা অনেক বেশি। এ অবস্থা সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলেও দেশে বিভিন্ন কারণে অস্থিতিশীলতা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ে কিছু প্রবৃদ্ধি ডলার সংকট কমিয়েছে। এতে অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে, তার প্রভাবে ব্যাংকে সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এতে ভবিষ্যতে শিল্পে বিনিয়োগ কমার শঙ্কা আছে। অন্যদিকে শেয়ারবাজারের বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারে লগ্নি করার তুলনায় ব্যাংকে টাকা জমা রেখে সুদ আয়কে বেশি নিরাপদ মনে করছেন। এতে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ কমেছে।
শীর্ষ এক মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই, একসময় বেশ কিছু কারসাজি চক্র শেয়ারবাজারের গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সংঘবদ্ধভাবে অনুসারীদের নিয়ে কোনো কোনো শেয়ারের দর বাড়িয়েছে, বাজারে চাহিদা তৈরি করেছে। তাদের দেখাদেখি অন্য শেয়ারের দরও কম-বেশি বেড়েছে। এখন তারা শেয়ার কেনাবেচায় সক্রিয় নেই। ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমেছে। এর মধ্যে ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় কৌশলী বড় বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করে নিরাপদ বিনিয়োগে চলে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে, যা থেকে বের হতে পারছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৯৩টির কেনাবেচা হয়েছে। এর ৮৩টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২৭১টিই দর হারিয়েছে। বাকিগুলোর দর অপরিবর্তিত ছিল। সূচকের ওঠানামা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রি-মার্কেট লেনদেনে ভর করে ডিএসইএক্স ৯ পয়েন্ট বৃদ্ধির মাধ্যমে সকাল ১০টায় দিনের লেনদেন শুরু হয়। সূচক উঠেছিল ৫১৭৯ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করে। সূচকের এ অবস্থানই দিনের সর্বোচ্চ। অধিকাংশ শেয়ার দর হারাতে শুরু করলে এর মাত্র ২৪ মিনিটে ৭৫ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১০৩ পয়েন্টে নামে। এরপর কিছুটা বাড়লেও তা টেকেনি। বেলা ১টা ৩২ মিনিটে বুধবারের তুলনায় প্রায় ৮২ পয়েন্ট বা দিনের সর্বোচ্চ অবস্থানের তুলনায় প্রায় ৯১ পয়েন্ট হারিয়ে ৫০৮৭ পয়েন্ট পর্যন্ত নামে। যদিও সমাপনী মূল্যের হিসাবে আগের দিনের তুলনায় ৫৫ পয়েন্ট হারিয়ে নামে ৫১১৪ পয়েন্টে।
দর পতনের ধারায় লেনদেনে ভাটার ধারাও অব্যাহত আছে। গতকাল দিনব্যাপী কেনাবেচা হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকার শেয়ার। ১০ কোটি টাকার ওপর কেনাবেচা হয়েছে মাত্র তিন কোম্পানির শেয়ার। সর্বোচ্চ ১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন নিয়ে শীর্ষে ছিল গ্রামীণফোন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা পূবালী ব্যাংকের ১৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং তওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলোর প্রায় ১২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।