মাথা ব্যথা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা মাথা ব্যথায় ভোগেন না। তবে কিছু সময় কিন্তু সেটা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে না। অনেক সময় এর কারণ হতে পারে মাইগ্রেন। সাধারণ মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেন এক নয়।
মাইগ্রেন পেইন: মাইগ্রেন হচ্ছে ক্রনিক নিউরোলোজিক্যাল ডিসঅর্ডার বা দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুবিক রোগ। সাধারণত মাথার এক পাশে নিয়মিত মাঝারি বা তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় এবং এটি সাধারণ মাথাব্যথা থেকে পুরোপুরিই আলাদা। কখনো এই ব্যথা মাথার একপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ওই পাশের পুরো স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আবার মাইগ্রেনের সমস্যার কারণে অনেক সময় দৃষ্টি বিভ্রম বা বমি বমি ভাবও হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা একবারে টানা দুই থেকে তিন দিন ধরে চলতে পারে।
মাইগ্রেনের লক্ষণ: মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাথার যেকোনো একপাশে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের ব্যথা। অনেক সময় ব্যথার তীব্রতা এত বেশি হয় যে বমি বমি ভাবও হতে পারে।
অনেকের আবার এসব লক্ষণ-উপসর্গ ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ থাকে। যেমন- ঘাম, মনোযোগহীনতা, অনেক বেশি গরম বা অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভব হওয়া, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া। এসব লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দেখতে পান বা যদি মনে হয় এই লক্ষণগুলোর কোনোটি আপনার মধ্যে আছে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
মাইগ্রেনের কারণ: মাইগ্রেন কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু বিষয়কে মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন-
মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম: যখন স্নায়ু ব্যবস্থা, শরীরের রাসায়নিক উপাদান এবং রক্তনালিকে আক্রান্ত করে ফেলে, তখনই এই ধরনের তীব্র ব্যথা মাথার একপাশে অনুভূত হয়। মনে করা হয়, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম মাইগ্রেন হওয়ার বড় কারণ।
হরমোনজনিত পরিবর্তন: চিকিৎসকদের মতে ঋতুচক্রের সময় নারীরা বেশি মাইগ্রেনে ভোগেন। আবেগ বা অন্যান্য কারণ ও মাইগ্রেনের পেছনে ভূমিকা রাখে। যেমন: মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হঠাৎ পাওয়া আঘাত ইত্যাদি।’
শারীরিক কারণ: শারীরিক বিভিন্ন কারণেও অনেক সময় মাইগ্রেন হতে পারে। যেমন: ঘুম কম হওয়া বা রাতে ঘুম না হওয়া, হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা ইত্যাদি।
পরিবেশ: অনেকেই জানেন না পরিবেশগত কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে। আপনি যদি হঠাৎ করে গরম থেকে ঠান্ডা বা ঠান্ডা থেকে গরম পরিবেশে যান তাহলে আপনার হঠাৎ করে মাইগ্রেনের সমস্যা শুরু হতে পারে।
খাবার: আমাদের খাদ্যাভ্যাসও অনেক সময় মাইগ্রেন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। খাবারে অনিয়ম করা, পানিশূন্যতায় ভোগা, মদ্যপান করা, অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা এসব নানা ধরনের অনিয়ম মাইগ্রেন হওয়ার পেছনে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে।
মাইগ্রেনের চিকিৎসা: চিকিৎসকরা জানান, মাইগ্রেনের চিকিৎসা নয় বরং জীবনযাপনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যারা মাইগ্রেনে ভোগেন তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনেক পরিবর্তন আনেন, খাবার-দাবাড়ের অভ্যাসে পরিবর্তন আনেন, যাতে করে মাইগ্রেন নিয়ে বসবাস কিছুটা সহজ হয়।
তীব্র ঠান্ডায় অথবা অতিরিক্ত রোদে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
স্বাভাবিক শব্দের চেয়ে বেশি শব্দ অথবা অতিরিক্ত ফলাফল পূর্ণ এলাকা পরিহার করতে হবে
প্রতিদিন একই সময় ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে
প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পরিমিত ঘুম হতে হবে
অতিরিক্ত বেশি আলো বা অতিরিক্ত কম আলোতে কাজ করা যাবে না
মোবাইলের সামনে থাকা যাবে না
এরপরেও মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং মাথায় ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখুন।