গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুসহ ২৭ জনের নামোল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
সোমাবার ধানমন্ডিতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের প্রধান কো-অর্ডিনেটর বরাবর এই আবেদন দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর পিতা মো. আবুল হাসান। অভিযোগকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন।
আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন— সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, কামাল আহমেদ মজুমদার, মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদসহ মোট ২৭ জন।
এছাড়াও সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহ এবং অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মী এবং পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগের সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে ঘটনার সময়কাল গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশ উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, আসামিদের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিগণ দেশীয় ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন করেছে।
এর আগে গত বুধবার গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আরিফ আহম্মেদ সিয়ামের পিতা মো. বুলবুল কবির সেই অভিযোগটি দায়ের করেন। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার গাজী এম এইচ তামিম।
ওই আবেদনে শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রাশিদসহ পুলিশের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মী এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অঙ্গ সংগঠনসমূহকে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
গত বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনার বিচারের জন্য ইতোমধ্যে কিছু মামলা হয়েছে। কিন্তু রাজপথে থাকা ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনসহ অনেকে দাবি করছে যে এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে খতিয়ে দেখা যায় কি না। আমরা দেখেছি, জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচার করা সম্ভব।
জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত টিম কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যারা যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
(সীমান্তবাংলা/১৯আগস্ট/জে আর)